English | Bangla
ঈদে নিরাপদ যাতায়াতে বিশেষ পরিকল্পনা ও তদারকি অব্যাহত রাখা
প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষ্যে যাতায়াত ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সড়কপথে মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানিসহ ঘরমুখো মানুষকে রাস্তায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গত ঈদুল ফিতরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রায় তিনশত মানুষ মারা যান। আহত হয়ে পঙ্গু হওয়ার পথে আরো শত শত মানুষ। এসব দূর্ঘটনার মধ্যে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশে দুটি যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৭ জন নিহত হন। বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করে গত ঈদুল ফিতরে বিপুল সংখ্যক হতাহতের ঘটনা আমাদেরকে আতংকিত করে। ঈদ যাতায়াত নিরাপদ করতে বিশেষ পরিকল্পনার আলোকে ব্যবস্থাপনা তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে। পরিবেশ বাঁচাও অন্দোলন (পবা) এবং ডাব্লিউবিবির উদ্যোগে ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫, তারিখ, সকাল ১১টায়, পবা কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
বৈঠকে বক্তারা বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে মাত্র কয়েকটি দিন উপভোগ করতে যাওয়া মানুষের সকল আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয় যাতায়াতের ক্ষেত্রে তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে। নিরাপদ, জ্বালানী সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব বাহন রেল ও নৌপথকে উপেক্ষা করা; অতিরিক্ত সড়ক নির্ভরতা, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক অবকাঠামো ও যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, বেপরোয়া ও অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালনা, অতিরিক্ত লোড বহন, সড়কে প্রদত্ত সংকেত অনুসরণ না করা, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির আওতায় না আনা, আইন যুগোপযোগী না করা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা (মালিক, চালক, বিআরটিএ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর), সর্বস্তরে সচেতনতার অভাব, ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন, সর্বোপরি সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাবে যাতায়াতে যানজট ও দূর্ঘটনা প্রতিনিয়তঃ বেড়ে চলেছে। সুতরাং যাতায়াত ব্যবস্থার এই সংঙ্কট উত্তরণে পরিকল্পিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। 
 
ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াতে করণীয় ঃ 
- ঈদ উপলক্ষে রেল, বাস ও নৌ টার্মিনালগুলোর ব্যবস্থাপনা কি হবে তা বিশেষ পরিকল্পনার আলোকে আনা। এবং ব্যবস্থাপনা নিয়মিতভাবে তদারকির ব্যবস্থা রাখ। 
-বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি অফিসে যেসমস্ত বিআরটিসি বাস দেয়া হয়েছে তা ঈদ যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার করা।
-সরকারি ও বেসরকারি অফিসে কর্মকতাদের ঈদ পূর্ববর্তী ছুটি ২ (দুই) দিনে ভাগ করে প্রদান করা এবং ঈদ পরবর্তী ছুটিও একইভাবে সমন্বয় করা।
- বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টসসহ শ্রমিকঘন শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐ এলাকার তিন ভাগের এক ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঈদের ৩ (তিন) দিন আগে,  অপর তিন ভাগের এক ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঈদের ২ (দুই) দিন আগে এবং শেষ তিন ভাগের এক ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানে ঈদের ১ (এক) দিন আগে ছুটি প্রদান করা এবং ঈদ পরবর্তী ছুটিও একইভাবে সমন্বয় করা।
-রেলগাড়ি, বাস ও নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
-রেলের টিকিট প্রাপ্তি সহজ করতে কালোবাজারি প্রতিরোধ এবং নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত বরাদ্দ না দেয়া।  
-আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সহায়তায় অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে রেল, বাস ও নৌযানের টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা করা।
-বাস, রেল ও নৌযানে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার নিয়োগ করা। 
- বেপরোয়া চালনা, গতি নিয়ন্ত্রণ ও অতিরিক্ত লোড বহনে বাস চালক ও মালিকদের সর্তক করা।
- মহাসড়কের দূর্ঘটনাপ্রবণ ৫৫কিলোমিটারে বিশেষ নজরদারীর মাধ্যমে যানবাহনের গতি ও বেপরোয়া চালনা নিয়ন্ত্রণ করা। এলক্ষ্যে ঈদের আগে ও পরে সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা। 
-ভূয়া লাইসেন্সধারী মোটরযান ও নৌযনের চালকদের নিষিদ্ধ করা।
-সব ধরনের যানবাহন বিশেষ করে মোটরযান ও নৌযনের ফিটনেস সঠিকভাবে পরীক্ষা করা। 
-সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ নিয়মিতভাবে মনিটর করা এবং যেকোন ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়া মাত্র প্রয়োজনীয় স্থানে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত ও সংস্কার করা এবং নৌপথ সচল রাখা।
- মহাসড়কে গরুর হাট স্থাপন নিষিদ্ধ করা এবং তা যথাযথভাবে মনিটর করা।
 
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এলসি, এনসিডি মো: মারুফ হোসেন, প্রকল্প কর্মকর্তা মো: আতিকুর রহমান, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজনীন কবীর, পবার নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, সহ-সম্পাদক মো: সেলিম, ইউনাইটেড পিপলস ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক আলী হাজারী প্রমুখ।