English | Bangla
পলিথিন নিয়ন্ত্রণ ও পাটজাত দ্রব্য সহজলভ্য কর
বাংলাদেশে পলিথিনের ব্যাপক ও অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা এবং বাজারে বিকল্প সহজলভ্য না থাকায় মানুষ বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করছে। পলিথিন নিষিদ্ধে কিছু কিছু কারখানা ও বাজারে সরকারিভাবে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযান পরিচালনা করলেও পাটের ব্যাগ সহজলভ্য করতে কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এমতাবস্থায় পলিথিন নিয়ন্ত্রণ ও পাটজাত দ্রব্য সহজলভ্য করার দাবীতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, আইনের পাঠশালা, ইয়থ সান, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের যৌথ আয়োজনে আজ ২৫ নভেম্বর ২০১৫, বুধবার, সকাল ১১টায় শাহবাগস্থ চারুকলা অনুষদের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
 
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন আইনের পাঠশালা সভাপতি এডভোকেট সুব্রত দাস খোকন, পবার সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুমন রহমান, প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, ডাব্লিউবিবির প্রোগ্রাম অফিসার মো: আতিকুর রহমান, পবার সহ-সম্পাদক মো: সেলিম, ইয়থ সানের সভাপতি মাকিবুল হাসান বাপ্পী, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, পরিবেশকর্মী সুমন মাহমুদ, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সভাপতি শহীদ মাহমুদ শহীদুল্লাহ, নাসফের অর্থ সম্পাদক এস কে এম এ কাদের, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি মো: নাজিম উদ্দিন, মো: ইমরান হোসাইন, হোম ইকোনোমিকসের ছাত্রী নাঈমা হক, শাহনা পারভীন প্রমুখ। 
 
বক্তারা বলেন, ঢাকা শহরে একটি পরিবার প্রতিদিন গড়ে চারটি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। সে হিসেবে প্রতিদিন এক কোটির বেশী পলিথিন ব্যাগ একবার ব্যবহার শেষে ফেলে দেয়া হয়। এগুলো দ্বারা ড্রেন, নালা, খাল, ডোবা ইত্যাদি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে দেয়। পলিথিন অপচনশীল বলে দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি এবং অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাঁধা সৃষ্টি করে; পঁচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়, উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের বিস্তারে বাঁধা সৃষ্টি করে। পলিথিনে মোড়ানো গরম খাবার গ্রহণ করলে ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করা হলে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা মাছ ও মাংস দ্রুত পঁচনে সহায়তা করে; পিভিসি এবং অন্যান্য প্লাষ্টিক জাতীয় আবর্জনা ৭০০ সে. তাপমাত্রার নিচে পোড়ালে ডাইঅক্সিন জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয় যা জন্মগত ত্রুটি, চর্মরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি মারাতœক রোগের জন্য দায়ী; উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংম্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও চর্র্মপ্রদাহের সৃষ্টি হয়; ওভেনপ্রুফ প্লাষ্টিক কনটেইনার খাবার গরম করলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারে ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক, সীসা মিশে যায়, যার ফলে মরাত্মক রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে; পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়, এমনকি ডায়রিয়া ও আমাশয় ছড়াতে পারে এ ব্যাকটেরিয়া থেকে।
 
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (২০০২ সনের ৯ নং আইন দ্বারা সংশোধিত) এর ৬ক ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সকল বা যে কোন প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ, বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরী অন্য কোন সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলে, এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানী, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। 
 
রাজধানীসহ সারা দেশে প্রায় এক হাজার নিষিদ্ধ পলিথিন তৈরীর কারখানা রয়েছে। এগুলোর বেশীর ভাগই পুরানো ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। মিরপুর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, কামরাঙ্গীরচর ও টঙ্গীতে ছোট-বড় বেশ কিছু কারখানা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত 
পৃ- ০১
বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। এছাড়া চট্রগ্রামসহ জেলা শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে পলিথিন কারখানা। পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। 
 
পলিথিন ব্যবহারের কারণে জনজীবন, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পাটের কদর কমে যাচ্ছে, কমছে পাট চাষ। বন্ধ হচ্ছে পাট দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের কারখানা। বেকার হচ্ছে কুটিরশিল্পের মালিক ও শ্রমিক-কর্মচারীরা। সারা বিশ্বে পাটের চাহিদা বাড়লেও আমাদের অবহেলা ও সচেনতার অভাবে সোনালি আঁশ পাট আজ বিলুপ্তির পথে। আমাদের এ শিল্পকে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে কার্যকর ভ’মিকা পালন করতে হবে এবং জনগণকে সচেতন হতে হবে।
 
পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৫৩ নং আইন) (২০১৩ সনের ৩৮ নং আইন দ্বারা সংশোধিত) এর ধারা-৪ পণ্য সামগ্রীতে পাটজাত মোড়ক ব্যবহারঃ কোন ব্যক্তি বিধি দ্বারা নির্ধারিত পণ্য, পাটজাত মোড়ক দ্বারা মোড়কজাতকরণ ব্যতিত, বিক্রয়, বিতরণ বা সরবরাহ করতে পারবে না। 
 
আমাদের দাবীসমূহ-পলিথিন নিষিদ্ধকরণ আইন বাস্তবায়ন করা। পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করা। বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ব্যাগ ও ঠোংগা ইত্যাদি সহজলভ্য করা এবং এগুলো ব্যবহারে জনগণকে উদ্ভুদ্ধ করা। পলিথিন শপিং ব্যাগ তৈরীর কাঁচামালের উপর উচ্চ হারে করারোপ করা।