English | Bangla
যানজট, দূষণ ও যাতায়াত খরচ হ্রাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইসাইকেল সার্ভিস কর্মসূচির উদ্বোধন

যানজট, দূষণ, যাতায়াত খরচ হ্রাস এবং সুস্থ থাকার জন্য বাইসাইকেলকে পুনরায় জনপ্রিয় করা প্রয়োজন। প্রতিদিন ঢাকাবাসীকে যানজটে দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে দূষণ ও যাতায়াত খরচ। যা স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সামগ্রিক পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বাইসাইকেল সার্ভিস কর্মসূচির উদ্বোধনকালে উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক। তিনি যানজট, দূষণ ও যাতায়াত খরচ হ্রাস এবং সুস্থ থাকার জন্য সকলকে নিয়মিত সাইকেলে চলাচলের আহ্বান জানান। ১৩ মার্চ ২০১১, সকাল ১০.৩০টায় ঢাবি অপরাজেয় বাংলা এর পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন), ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন ও গ্রীণ বেল্ট ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ক্যাম্পাসভিত্তিক সার্ভিস কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট এর শুভ উদ্বোধন করা হয়।

উপাচার্য আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ ও বিজ্ঞান অনুষদ এ দুইটি স্থানে সাইকেল থাকবে। যেখান থেকে সার্ভিসের সদস্যপদ নেওয়ার মধ্য দিয়ে ছাত্র/ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে পারবেন। পর্যায়ক্রমে ক্যাম্পাসের অন্যান্য স্থানেও সাইকেল রাখা হবে এবং আরো বেশি শিক্ষার্থী এই সার্ভিসের সুবিধা পাবে।

সাইকেল কর্মসূচির আহ্বায়ক, পরিবেশ সংগঠক কামরুল আহসান খান বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও এর ফলে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন রোধ বর্তমান বিশ্বে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। যানবাহন থেকে কার্বন নির্গত হওয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসাবে বিবেচিত। এ কারণে উন্নত দেশগুলো ক্রমশ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছে। অযান্ত্রিক দূষণমুক্ত ও কম দূষণের গণপরিবহণকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিশুদ্ধ বায়ূ সেবন ও শব্দ যন্ত্রণামুক্ত পরিবেশ তৈরি ও যাতায়াত খরচ কমানো এবং ঢাকা শহরের যানজট থেকে পরিত্রাণের জন্য জনসাধারণকে বাইসাইকেল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য। ইতিপূর্বে জাতীয় ইস্যূতে বিভিন্ন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। আশা করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বাইসাইকেল সার্ভিস কর্মসূচি চালু করবে।

ঢাবি কলা অনুষদ এর অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন বলেন, বিশ্বের সকল উন্নত দেশেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র/ছাত্রীরা সাইকেলে যাতায়াত করে। বাংলাদেশে অধিকাংশ সড়ক সমতল বলে তিনি উল্লেখ করেন, এখানে সাইকেল খুবই উপযোগী একটি বাহন। ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের নির্বাহী সদস্য এবং দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আজিজুন নাহার ইসলাম বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশে মেয়েরা সাইকেলে চলাচল করছে। এমনকি বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই মেয়েরা সাইকেলে করে বিদ্যালয় ও কর্মস্থলে যাতায়াত করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ মেয়েদের সাইকেল চলাচলে উদ্বুদ্ধ করবে এবং তাদের যাতায়াত সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখবে।

বাপা এর নির্বাহী সদস্য মহিদুল হক খান বলেন, সাইকেলে যাতায়াতের মাধ্যমে নিজের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি পরিবেশের দূষণ নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখা সম্ভব। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষামূলকভাবে সাইকেল সার্ভিস কর্মসূচি চালু করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে এর সম্প্রসারণ ঘটবে এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসেও এই কর্মসূচি চালূর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান বলেন, নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে সাইকেলে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও সাইকেলে চলাচলের অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। সাইকেল সার্ভিস চালুর লক্ষে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক এর নিকট বিশটি সাইকেল হস্তান্তর করা হয়।

ক্যাম্পাসভিত্তিক সাইকেল সার্ভিস কর্মসূচির আহ্বায়ক কামরুল আহসান খান এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব পরিচালনা করেন গ্রীণবেল্ট ট্রাস্ট এর মহাসচিব জসিম কাতাবী। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক মোঃ আলমগীর হোসেন, বাপা এর যুগ্ম সম্পাদক শাজাহান মৃধা বেনু, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, সিটিজেন রাইটস্ মূভমেন্ট এর মহাসচিব তুষার রেহমান প্রমূখ।