English | Bangla
যানজট হ্রাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ নিশ্চিত করার আহবান

স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যানবাহনের উপর নির্ভরশীলতা এবং সর্বোপরি যানজট, যাতায়াত ব্যয়, জ্বালানী অপচয় ও পরিবেশ দূষণ হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। অথচ বর্তমানে হাঁটার পরিবেশ ভালো না হওয়ায় লাখ লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের পড়তে হচ্ছে দুর্বিষহ কষ্টে। ফলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক সুস্থতা এবং সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। 16 মার্চ  2016 সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর পরিবহন বিষয়ক কমিটি এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত “যানজট হ্রাসে শিক্ষার্থীদের হেঁটে বিদ্যলয়ে যাতায়াতের গুরুত্ব” শীর্ষক মতবিনিময় সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
স্বাগত বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারি বলেন, নগরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকা এবং বাসা বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় শিশুদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম হয় না। ফলে শিশুরা নানা রকম রোগে যেমন আক্রান্ত হচ্ছে পাশাপাশি নেতিবাচক মানসিকতার বহি:প্রকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিদিন স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুদের শারীরিক পরিশ্রমের অভাব পূরণ করা সম্ভব। প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, বর্তমানে ঢাকার শহরে প্রধান সমস্যা হচ্ছে যানজট। বিশেষ করে স্কুলের সময় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সমস্যা আরো তীব্র হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, রায়েরবাজার এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করলেও ব্যক্তিগত গাড়ির অধিক গতির জন্য ৭৭.৩৮ শতাংশ এবং রাস্তায় ময়লা আবর্জনার জন্য ৭৩.২১ শতাংশ শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন সমস্যায় পড়ছে। রায়েরবাজর থেকে শংকর পর্যন্ত গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা দূর করে পথচারী বান্ধব করা হলে অন্যান্য রোডের মডেল হিসেবে তুলে ধরা সম্ভব হবে। 
 
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লান্যার্স- এর সাধারন সম্পাদক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, একটা শহরের ফুটপাত দেখে বুঝা যায় ঐ শহর কতটা প্রাণবন্ত ও নিরাপদ। আমাদের নগর পরিকল্পনায় মহল্লা ভিত্তিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিতে হবে। মহল্লার স্কুলগুলোকে মানসম্মত করতে অভিভাবকদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। ঢার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে দেশের ৩২৫ টি পৌরসভার সমান উন্নœয়ন প্রয়োজন। 
নিরাপদ সড়ক চাই এর চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমাদের এই নগর শিশুবান্ধব নয়। শহরের রাস্তাগুলো আমাদের কাছে আতঙ্কের একটি জায়গা হয়ে গেছে। শুধু সরকারের প্রতি নির্ভরশীল হলে চলবে না। কিছু দায়িত্ব সাধারন জনগনকেও নিতে হবে। স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের রাস্তায় হাঁটার নিয়ম- কানুন শিক্ষা দিতে হবে। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, নগর পরিকল্পনায় অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং সাধারন জনগনকে এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বাসযোগ্য শহর করতে পরিকল্পনাবিদদের ইট, বালি, দালানের চিন্তা থেকে বের হয়ে সবুজের প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক জে কে বড়াল বলেন, আমরা পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় পরিসরে শিশুদের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কিন্তু সেই পরিবেশ তৈরি করতে পারছি না। সকল শিশুর জন্য নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে ঢাকাকে ১০ টি জোনে ভাগ করে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। 
 
বুয়েটের  নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. ইশরাত ইসলাম বলেন, এই শহরটিকে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কঠিন করে ফেলেছি। নগরে  শিশুদের কাছ থেকে আমরা গাছ, পাখি এবং আকাশ কেড়ে নিচ্ছি। ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে এবং সর্বপরি আমাদের মানসিক পরিবর্তন করে নগরটিকে বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। 
 
উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর সদস্য সচিব আমিনূর রসুল বলেন, সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিশুদের হেঁটে স্কুলে যাওয়ার পরিবেশ গড়ে তুলে হলে। স্কুলের মান বৃদ্ধিতে শিক্ষকদের আরো সক্রিয় হতে হবে। এতে করে দূরে ভর্তি হওয়ার প্রবনতা কমবে। 
কালেরকন্ঠের সিনিয়ির সাংবাদিক নিখিল ভদ্র বলেন, রায়েরবাজার স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী হেঁটে স্কুলে আসলেও আমরা তাদের জন্য কোন সুবিধা দিতে পারছি না। সরকার ইতিপূর্বে যানজন হ্রাসে স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে স্থানীয় এলাকায় ৪০ শতাংশ কোটার যে ব্যবস্থা করেছেন, তা বাড়িয়ে  ৮০ শতাংশ করা উচিত।  
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারি এডভোকেসি অফিসার নাঈমা আকতারের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, পরিকল্পনাবীদ সৈয়দা মনিরা আক্তার খাতুন, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা রেনেসা পারভীন এবং মনোবিজ্ঞানী সাদিয়া শারমিন উর্মি প্রমুখ।