English | Bangla
স্থায়িত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
‘তামাক কোম্পানিগুলো ধূর্ততার সঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তাদের কবল থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণসহ জনস্বাস্থ্য উন্নয়নকে সুরক্ষা প্রদান জরুরি। এছাড়া তামাক যেহেতু হৃদরোগ, ক্যান্সার, স্ট্রোক, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রধান কারণ, তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনায় স্থায়িত্বশীল তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরত্ব প্রদান করবে।’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কেন্দ্রে ১৬ মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১টায় অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্বশীল অর্থনৈতিক যোগান নিশ্চিতে করণীয় বিষয়ক সেমিনারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এ কথা বলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট যৌথভাবে এ সেমিনার আয়োজন করে। 
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ডা. ফারুক আহমেদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বৈশ্বিক সংগঠন দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সেমিনার সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মুখপত্র সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী।
 
এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্স (বিইউএইচএস) এর হেলথ্ প্রমোশন এন্ড হেলথ এডুকেশন বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. খুরশিদা খানম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ইএসডির পরিচালক ও লাইন ডাইরেক্টর ডা. এ এম মজিবুল হক, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ডা. শামীম জুবায়ের প্রমুখ। 
 
প্রবন্ধে সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ বাংলাদেশ, ২০০৩ সালে এ চুক্তি স্বাক্ষর ও ২০০৪ সালে এটি অনুস্বাক্ষর করে। পৃথিবীতে যত আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছে, এর মধ্যে স্বল্পতম সময়ে কার্যকর হওয়া চুক্তি এফসিটিসি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি। এতে তামাক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম সরকার কিভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেÑতার সম্পর্কে আর্টিকেল ৫.৩-এ দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তামাক নিয়ন্ত্রণসহ জনস্বাস্থ্যসম্পর্কিত সবক্ষেত্রকে তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে।
 
অধ্যাপক ডা. এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে গঠিত জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব হচ্ছে যথাক্রমে সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তাদের আইন সম্পর্কে দক্ষতা বাড়াতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এছাড়া অতীতের মতই তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে গুরুত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মপরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। পাশাপাশি আমরা আরও কি করতে পারি, সে বিষয়ে কেউ কোন পরামর্শ দিলে তা বিবেচনা করা হবে। 
 
মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দস বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার অত্যন্ত ইতিবাচক। সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধি করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে তিনটি নীতিমালা যথাক্রমে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা, তামাকের সাস্থ্যকর ব্যবহার নীতিমালা ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রক্রিয়াধীন। আশা করি, শীঘ্রই এসব চুড়ান্ত হবে। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণ বাধাগ্রস্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। তামাক বিরোধী সংগঠনের ছদ্মাবরণে তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিভিন্নভাবে কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এ সম্পর্কে গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংগঠনসহ সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। 
 
ডা. ফারুক আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, তামাকের ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যান্সার, হার্ট এটাক, স্ট্রোক, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী। এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী। এসব রোগে চিকিৎসা বাবদ সরকারের অনেক টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এছাড়া অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তাই এসব রোগ প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী সেরকম অঙ্গীকার ও নির্দেশনা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণসহ অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের চলমান কর্মসূচিকে জোরালো করতে স্বাস্থ্য বিষয়ক বেসরকারি সংগঠনগুলোকেও সক্রিয় হতে হবে। 
 
ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক বলেন, এফটিসিসির আর্টিকেল ৫.৩ সম্পর্কে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ ও তামাক কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ কিংবা আইন লঙ্ঘণের দায়ে তামাক কোম্পানি সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানি ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারব তবে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, এসব প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার বিষয়টিসহ সার্বিক আলোচনা নথিবদ্ধ করতে হবে।
 
মুক্ত আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. তানভীর আহমেদ চৌধুরী, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যান্সার এপিডেমিলোজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম সারোয়ার, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির মহাসচিব ডা. এস এম আব্দুর রহমান ও যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর প্রোগ্রাম অফিসার আতাউর রহমান মাসুদ, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ, ইপসা’র প্রোগ্রাম অফিসার নাজমুল হায়দার, বিএনএনআরসি’র সমন্বয়কারী (দক্ষতাবৃদ্ধি) তামান্না রহমান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পনা এবং গবেষণার সহকারি পরিচালক ডা. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। 
 
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, একলাব, নিউট্রিশেন এন্ড অটিজম রিসার্চ সেন্টার, আয়ূনস, ইকো সোসাইটি, হীল, সিডাস, এলআরবি ফাউন্ডেশন, সোস্যাল সেলটার, প্রদেশ প্রমুখ।