English | Bangla
আগারগাঁও প্যারেড গ্রাউন্ড সংলগ্ন জার্মপ্লাজম সেন্টারের মধ্যে মেট্রোরেল সাইট অফিস স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধের দাবী

বাংলাদেশ পরিব্শে আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি  (বেলা), তরুপল্লব, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং গ্রীন ভয়েস এর যৌথ উদ্যোগে আজ ৩০ অগাস্ট ২০১৭, বুধবার, সকাল ১১.০০ টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে “আগারগাঁও প্যারেড গ্রাউন্ড সংলগ্ন জার্মপ্লাজম সেন্টারের মধ্যে মেট্রোরেল সাইট অফিস স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধের দাবীতে” এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট লেখক-বুদ্ধিজীবি সৈয়দ আবুল মকসুদ এর সভাপতিত্বে এবিষয়ে মুলবক্তব্য রাখেন বাপা’র যুগ্মসম্পাদক মোঃ শাহজাহান মৃধা। বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক জনাব হামিদুর রহমান, বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন, পবা’র চেয়ারম্যান জনাব আবু নাসের খান, তরুপল্লব এর সাধারণ সম্পাদক জনাব মোকারম হোসেন, বাপা’র যুগ্মসম্পাদক জনাব মিহির বিশ্বাস ও হটিকালচার সোসাইটি’র কার্যকরী সদস্য জনাব আফজাল হোসেন। 
 
মুলবক্তব্যে জনাব মোঃ শাহজাহান মৃধা বলেন, আগারগাঁওস্থ ফলবীথি জার্মপ্লাজম সেন্টার নামের বাগানটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে ১৯৯০ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে। তখন রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে একটি নির্বাহী আদেশে আগারগাঁও সংলগ্ন জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারের পশ্চিম-দক্ষিণ অংশে একটি কেন্দ্রীয় ও প্রতিনিধিত্বমূলক বাগান স্থাপনের জন্য ৫ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নকশার মাধ্যমে জায়গাটির যে অবস্থান চিহ্নিত করা হয় তা বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বর্তমান জাদুঘর লাগোয়া উত্তর পাশ। প্রায় ২৭ বছরের ব্যবধানে এখানে দেশি বিদেশি ফলগাছের এক বিস্ময়কর জার্মপ্লাজম ভান্ডার গড়ে উঠেছে। এই সফলতা স্বয়ং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। দেশে খাদ্য উৎপাদনে ধারাবাহিক সাফল্যের পাশাপাশি ফল উৎপাদনেও ঈর্ষনীয় অর্জন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। রাষ্ট্রের এই সফল সংস্থাটি বিশেষত ফল গবেষণা ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে কতগুলো উদ্ভিদভা-ারের ওপর শতভাগ নির্ভরশীল। আগারগাঁয়ের ৭৩৯টি ফলজবৃক্ষের এই গবেষণা উদ্যান একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। কিন্তু গত ৩১ জুলাইয়ের একটি চিঠি সম্ভাবনাময় এ বাগানের সকল কর্মকা-কে বিষাদময় করে তুলেছে। হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন বাগান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও গবেষকরা। বিমান বাহিনী সদর দপ্তর প্রেরিত ঐ চিঠিতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জানানো হয়, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ অস্থায়ী কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের জন্য যে জায়গাটি চিহ্নিত করেছে তা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ব্যবহার্য ৫ একর জমিরই অংশ। চিঠিতে আরো জানানো হয়, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী জার্মপ্লাজম সেন্টারটির ২০০০ স্কোয়ার মিটার জমি সাময়িকভাবে প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করা হবে। মাতৃবাগান সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী মেট্রোরেলের অস্থায়ী কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণের সময় বাগানের প্রায় ৮০ ভাগ গাছ কাটা পড়বে। বাকি ২০ ভাগ নির্মাণযজ্ঞের ধকলে ধ্বংস হবে। সব মিলিয়ে সমৃদ্ধ এবং দরকারি এই বাগানটি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। যা খুবই বেদনাদায়ক। এই ফলবীথি মাতৃবাগানটির কর্মকা- নির্বিঘœ করার স্বার্থে ২০০০ সালেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। তাতে বাগানটি সংরক্ষণপূর্বক নিয়মিত কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এমন একটি স্পষ্ট নির্বাহী আদেশ থাকা সত্ত্বেও সেটি কেন মানা হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়।
 
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, পরিকল্পনায় ভূল হলে কোন কাজেই সফলতা পাওয়া যায় না। এমনই একটি কার্যক্রম চলতে যাচ্ছে এক্ষেত্রে। বাগানটি বিনষ্ট করার যে সিদ্ধান্ত, তা অবিবেচনা প্রসূত ও নিষ্ঠুর একটি কার্যক্রম। এই মাতৃ-বাগানটি জাতীয় অর্থনীতি, গবেষণা, খাদ্য-পুষ্টি ও নগরীর পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ এই বাগানটির যাতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। তিনি আরও বলেন, অতীতে অনেক সময় লক্ষ্য করেছি ঈদের মত এধরণের ছুটির সময়ই চুপিসারে বৃক্ষ নিধনসহ পরিবেশ বিনষ্টকারী অনেক কাজ করা হয়। তাই মাতৃ-বাগানের ক্ষেত্রে যাতে এমনটি না ঘটে তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
 
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বিশ্বের প্রতিটি শহরেই বাগানগুলোকে ফুসফুস হিসেবে বিবেচনা করে তা সংরক্ষণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। অথচ ঢাকা মহানগরীর বাগানগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। ঢাকার জলাধারগুলো ধ্বংস করার কারণে যেভাবে আজ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তেমনি এই বাগানগুলো বিনষ্টের কারণে পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনা, নগরবাসীর নির্মল বাতাস গ্রহণ ও প্রকৃতিকে জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।  তাই ফলবীথিটি রক্ষার জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
 কৃষিবিদ হামিদুর রহমান বলেন, ১৯৯০ সালে বাগানটি গ্রহণের পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টায় এটিকে দেশের অন্যতম জার্মপ্লাজম হিসেবে তৈরী করা হয়েছে। মাতৃ-বাগানটির চারা-কলমগুলো পৌঁছে যাচ্ছে দেশের অন্যান্য হর্টিকালচার সেন্টারগুলোতে। পাশাপাশি সমৃদ্ধ হচ্ছে ঢাকার ছাদবাগানগুলো। বর্তমানে আমরা ঢাকার ছাদবাগানগুলোতে যে সব সুসজ্জিত ফলবৃক্ষের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করি তার সিংহভাগ অবদানই এ মাতৃ-বাগানের। তিনি বলেন, ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে, বিশ্বে ৮ম অবস্থানে রয়েছি আমরা। এ সফলতা ধরে রাখার জন্য মাতৃবাগানসহ এধরণের অন্যান্য বাগানগুলোকে রক্ষা করতে হবে। মাতৃ-বাগান ঘিরে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহনের আহবান জানান তিনি।
 
ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি, যে কোন উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রথম আঘাত এসে পরে বৃক্ষের উপর। বৃক্ষ নিধন একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে, যা খুবই দুঃখজনক। নগর উন্নয়নে বৃক্ষকে বাঁচিয়ে রেখে পরিকল্পনা গ্রহন করা উচিত। তিনি বলেন, আমাদের মেট্রোরেল যেমন দরকার তেমনি বাগান তথা ফল-ফলারিও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই কাজটির মধ্যে একটি আন্তঃসমন্বয় তৈরি হোক। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বাগানটি বাঁচানোর স্বার্থে বিকল্প কোনো স্থানের কথা ভাবতে পারে, পাশেই যথেষ্ঠ স্থান রয়েছে। নগরের প্রাকৃতিক ভারসাম্যতা এবং খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনে, সর্বোপরী জাতীয় স্বার্থেই একটি বিকল্প স্থানে মেট্রোরেল তাদের নির্মাণ কাজের জন্য চেষ্টা করবেন, এটিই আমাদের দাবী । 
 
জনাব আবু নাসের খান বলেন, এমনিতে ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তার ওপর প্রকৃতি ও পরিবেশের আধারগুলো বিনষ্ট করে নগরবাসীকে আরো হুমকীর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই মাতৃ-বাগান নিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম জ্ঞান আহরণ করবে, গবেষণা করবে ও প্রকৃতিকে জানতে শিখবে। তাই ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে এই বাগানটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। পরিবেশবান্ধব নগরী নিশ্চিত করতে মাতৃবাগানসহ মহানগরীর অন্যান্য বাগানোগুলোও রক্ষার আহবান জানান তিনি।
 
জনাব মোকারম হোসেন বলেন, আমরা যখন প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে সারাদেশে বেশ আনন্দঘন পরিবেশে লক্ষ লক্ষ গাছের চারা রোপণ করছি, ঠিক এমন একটি মহূর্তে ৭৩৯টি মাতৃগাছ কেটে ফেলা কোনো যৌক্তিক কাজ হতে পারে না। প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করার মধ্যে কোনো বীরত্ব নেই। জাতীয় স্বার্থেই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশ যেন লংঘিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি। 
 
জনাব মিহির বিশ্বাস বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পটির সাইট অফিস করার জন্য পাশে আরো জায়গা থাকা সত্ত্বেও বৃক্ষ নিধণ করে জায়গা বের করার সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই কোন মহলের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।