English | Bangla
তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধে করনীয় বিষয়ক কর্মশালা
এইড ফাউন্ডেশন, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে গত ১১ নভেম্বর ২০১৮ ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে "Workshop on Sharing Experience of TAPS Ban Survey and the Next Necessary Action" বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
 
সকাল ১১ টায় উদ্বোধনী অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন এইড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ, স্কোপ এর নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন। বিকেলে সমাপনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর সাবেক সমন্বয়কারী জনাব মুহম্মদ রূহুল কুদ্দুস। কর্মশালার সেশন পরিচালনা করেন দি ইউনিয়ন এর কারিগরি পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মসূচী ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান। 
 
কর্মশালায় দিনব্যাপী তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার এবং পৃষ্ঠপোষকতা (TAPS) এর গবেষনা কার্যক্রম পরিচালনায় মনিটরিং, সিভিল সোসাইটিকে অর্ন্তভূক্তকরণ, সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা, টাস্কফোর্স সক্রিয়করণ এবং তামাক কোম্পানির কার্যক্রম পর্যবেক্ষন এই পাঁচটি বিষয়ের উপর আলোচনা করা হয়। কর্মশালায় ২৫ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন । Law ও IAWER) বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ মাহবুবুল আলম। প্রবন্ধে আলোচিত প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর আলাদা করে গ্রুপ ওয়ার্ক এর মাধ্যমে আগামী দিনের পরিকল্পনা করা হয়।  
 
প্রবন্ধে সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখিত বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত ধারা ৫ বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। মূলত তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারনা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় (TAPS) নিয়ন্ত্রণে (IAWER) Identification, Administrative and Awareness, Warning, Enforcement, Report and Result পদ্ধতি ব্যবহার প্রসঙ্গে আলোকপাত করেন। তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন সনাক্তকরণ এবং সনাক্তকরণে পদ্ধতি। এলাকাভিত্তিক  সচেতনতামূলক কার্যক্রম সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা তৈরীতে এই পাচঁটি বিষয়কে টার্গেট নির্ধারণ করে কাজ করলে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার এবং পৃষ্ঠপোষকতা (ঞঅচঝ) গবেষনার কাজটি অনেক ফলপ্রসূ হবে বলে কর্মশালায় উপস্থাপন করা হয়।
 
আলোচনায় মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো আইন লংঘন করলেও দোকানদারদের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদাণ করায় সরাসরি কোম্পানীগুলোকে ধরা যায়না। অধিকাংশ সময় কোম্পানিগুলো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে আইন লংঘনকারী কোম্পানীগুলোকে সরাসরি শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। আমরা মনে করি আমাদের গবেষণার মাধ্যমে তথ্য খুঁজে এনে নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রদানের প্রেক্ষিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে এ অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।
 
মুহম্মদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপনের ধরনগুলো সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারলে সেগুলো সংশ্লিষ্ট জায়গায় প্রেরণ করে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। (TAPS) গবেষণা একটি গুরত্বপূর্ণ ও কার্যকরী পদক্ষেপ। 
 
গাউস পিয়ারী বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা এবং কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমাদের সফলতা লাভের জন্য সরকারের সাথে একত্রে কাজ করতে হবে। তাহলেই তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে। 
 
এ কে এম মাকসুদ বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার এবং পৃষ্ঠপোষকতা (TAPS) এ সার্ভের কাজটি এ্যাপসের মাধ্যমে করা হলে জটিলতা কমবে। ডাটাবেজের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা, ফলোআপ এ্যাকশান ইত্যাদি কাজ করা সহজ হয়ে যাবে। মোবাইল কোর্ট করার আগে আমরা উক্ত তথ্য সম্পর্কে সহজেই জানতে পারবো।  
 
আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, আমাদের তামাকের বিজ্ঞাপনের বিষয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা করা প্রয়োজন। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করলে জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে এ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সার্ভে করার পাশাপশি এই সচেতনতামূলক কার্যক্রমটিও করা জরুরী। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে এ বিষয়ে আরো অগ্রনী ভূমিকা পালনের আহবান জানাচ্ছি।
 
কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণকে একটি মুভমেন্ট হিসেবে চিন্তা করতে হবে। তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন অপসারন করতে পারলে একজন তরুণ কে ধূমপান থেকে বিরত রাখা অনেকটা সম্ভব। দোকানীরা তথ্য সংগ্রহকারীকে তামাক কোম্পানীর প্রতিনিধি মনে করে। তামাক কোম্পানীগুলো স্থানীয় প্রভাবশলীদেরকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করা কঠিন।
 
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা উল্লেখিত বিষয়ে বক্তব্য রাখেন, (TAPS) চিহ্নিতকরে সরকারি অফিসে প্রেরণ করলে সেখান থেকে উদ্যেগ নিতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রচারনার মাধ্যমে জানানো হলে তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্যেগ গ্রহন করা হয়, তবে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আইন সম্পর্কে দোকানদার ও কোম্পানীকে জানানো হয়। টাঙ্গাইলে বিএটিবি এর ১০ জনের টিম ঝামেলা করে। ডিসি অফিসে জানালে বা পরিচয় জানানোর পর তারা আর ঝামেলা করেনি। দোকানীদেরকে বিজ্ঞাপন বা আইন সম্পর্কে জানানো হলে তারা তামাক কোম্পানির কথা এড়িয়ে চলে। কোম্পানি সরকারকে কর প্রদান করে সুতরাং বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে এই ধরনের বিভ্রান্তকর তথ্য প্রদান করে। মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে জরিমানা করলে টাকা উক্ত কোম্পানি পরিশোধ করে দেয়।