English | Bangla
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আইন সংশোধন জরুরী
তামাকের ব্যবহার আর্থ সামাজিক অবস্থা ও পরিবেশের উপর বিরূুপ প্রভাব ফেলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এফসিটিসি অনুযায়ী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী আইনগুলো যুগোপযোগী করা জরুরী। বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে অনেক অর্জন রয়েছে। দেশের সরকার প্রধান তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন সংশোধনের পাশাপাশি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়ন এবং তামাক কোম্পানীর প্রভাব প্রতিহত করা জরুরী। 
 
উপোরোক্ত বিষয়াবলী বিবেচনায় নিয়ে আজ ২০ এপ্রিল ২০২২, সকাল ১১টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট সম্মিলিভাবে পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাব কক্ষে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে করনীয়” শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট(বাটা)’র উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব)র সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু’র সভাপতিত্বে এবং ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি (গাইবান্ধা-১) এর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দ্যা ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। উক্ত সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জনাব মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি (সিরাজগঞ্জ- ২), বেগম আরমা দত্ত এমপি (সংরক্ষিত মহিলা আসন- ১১), জনাব রানা মোহাম্মদ সোহেল এমপি (নীলফামারী-৩), বেগম আদিবা আনজুম মিতা এমপি (সংরক্ষিত মহিলা আসন- ৩৭) এবং জনাব হোসেন আলী খোন্দকার (সমন্বয়কারী-অতিরিক্ত সচিব, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল)।
 
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বক্তা তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অর্জন, কোম্পানীগুলোর হস্তক্ষেপ, তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত ভ্রান্তধারনা সর্ম্পকে গবেষণালব্দ তথ্য তুলে ধরেন। সভায় মাননীয় সংসদ সদস্য এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আইন সংশোধন ও তামাক কর বৃদ্ধিতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানানো হয়। সুনিদিষ্ট করারোপ এবং তামাক কোম্পানীর কর ফাঁকি রোধ করা গেলে যাবতীয় হৃদরোগ চিকিৎসা বিনামূল্যে করা সম্ভব।
 
মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, তামাক চাষের ফলে কৃষিজমি উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায় এবং তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে পরিবেশের উপরে বিরুপ প্রভাব পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যায় অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। সরকার প্রধান যেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সেখানে প্রজাতন্ত্রেও কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসা জরুরী। 
 
হাবিবে বিল্লাত বলেন, করোনা মহামারীতে মৃতের সংখ্যা তামাকজনিত রোগে মৃতের সংখ্যার মাত্র এক তৃতীয়াংশ। তামাক নিয়ন্ত্রন আইন সংশোধনের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া তামাকের উপর কর বাড়ানোর দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রীকেও চিঠি দেয়া হয়েছে যেটির অগ্রগতি এখনো জানা যায়নি। আমরা আশা করি সরকার এক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দেবে। 
 
এরোমা দত্ত বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রন কার্যক্রমকে কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় এবং বর্তমান আইনের দূর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে কিভাবে সেটি পরিবর্তন করা সম্ভব তার একটি বাস্তবিক রুপরেখা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে হবে। সুশীল সমাজ, সরকারী কর্মকর্তা এবং সংসদ সদস্যদের নিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে হবে। পরিশেষে তিনি তামাক নিয়ন্ত্রন আন্দোলনকে আরো বেগবান করার আহবান জানান।
 
আবিদা মিতা বলেন, তামাকের মতো ক্ষতিকর পন্য নিয়ন্ত্রণে লাগাতার আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। তামাক ব্যবহারে জনগনকে নিরুৎসাহিত করা সম্ভব হলে হৃদরোগের ঝুকি বহুলাংশে কমে যাবে। পরিশেষে তিনি সমাজের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে তামাক নিয়ন্ত্রন আন্দোলনে সামিল হওয়ার উদাত্ত আহবান জানান।
 
রানা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে উল্লেখযোগ্য হারে কর বৃদ্ধির ফলে তামাক নিয়ন্ত্রনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রন আইনের বেশ কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে যা তামাক নিয়ন্ত্রন কার্যক্রমে বড় বাধা। ধাপে ধাপে এই ত্রুটিগুলো সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। সেইসাথে তামাক নিয়ন্ত্রণের সাথে সাংঘর্ষিক আইনগুলো সংশোধন কওে যুগোপযোগী করতে হবে।
  
হোসেন আলী খন্দকার বলেন, এনটিসিসির পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন চুড়ান্ত করা হয়েছে এবং রেজুলেশন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি সরাসরি আইন ও অর্থ মন্ত্রনালয়ে যাবে। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও এই সমন্বিত তামাক নিয়ন্ত্রন কার্যক্রমে অংশগ্রহন করার আহবান জানান। তামাক নিয়ন্ত্রন নীতিতে কোম্পানির হস্তক্ষেপ ও তামাক কোম্পানিতে সরকারের বিদ্যমান শেয়ারকে তামাক নিয়ন্ত্রনে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন। পরিশেষে তিনি তামাক নিয়ন্ত্রনে সংসদ সদস্যদের ইতিবাচকভাবে অংশগ্রহণের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
 
সুশান্ত সিনহা বলেন, ১০ শতাংশের কম শেয়ার থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী (বিএটিবি) এর পরিচালনা পর্ষদে সরকারের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। এটি সরকারের সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রম (সিএসআর) এ তামাক কোম্পানীর তুলনায় অন্যান্য কোম্পানী অধিক ব্যয় করলেও তামাক কোম্পানীর প্রচারনা বেশী লক্ষ্য করা যায়। কোম্পানির অবৈধ হস্তক্ষেপের তথ্যগুলোকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে। এছাড়াও তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার বাস্তবায়নে অতি দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়নের দাবী জানান।
 
এছাড়াও, সভায় উপস্থিত বক্তারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করে যুগোপযোগী করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তামাক কোম্পানীগুলোর অবৈধ হস্তক্ষেপ, আইন বাস্তবায়ন ও সহায়ক নীতি প্রণয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরী করছে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে বিগত দিনে অর্জনের পিছনে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন রয়েছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে বর্তমান আইনটি শক্তিশালী করার পাশাপাশি বাংলাদেশে বিদ্যমান যে আইন তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে সেগুলোও সংশোধন করা জরুরী। সভায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ড. আহমুদুজ্জামান (নির্বাহী পরিচালক, অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রনালয়), জাকির হোসেন ভুইয়া মাসুদ (বিশেষ প্রতিনিধি, ডাব্লিউএইচও), নাসির উদ্দীন শেখ (কান্ট্রি ম্যানেজার, ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিস বাংলাদেশ), ইকবাল মাসুদ (পরিচালক, স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহসানিয়া মিশন), ফাহমিদা ইসলাম (ফোকাল পার্সন, স্টপ), হামিদুল ইসলাম হিল্লোল (প্রকল্প ব্যবস্থাপক, বিইআর), সাগুফতা সুলতানা (প্রকল্প পরিচালক, এইড ফাউন্ডেশন), সৈয়দা অনন্যা রহমান (হেড অফ প্রোগ্রাম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট), মো. বজলুর রহমান (সহ. অধ্যাপক, ডিআইইউ) ও প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।