English | Bangla
পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারের যোগান নিশ্চিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে স্থাপিত হবে ৬টি কৃষকের বাজার

ভোক্তাদের জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবারের যোগান নিশ্চিতের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় ৬টি কৃষকের বাজার স্থাপিত হতে যাচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পরামর্শে ৬টি ওয়ার্ডে অস্থায়ীভাবে কৃষকের বাজার স্থাপন করা হবে, যেখানে প্রতি সপ্তাহে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০ জন কৃষক তার উৎপাদিত নিরাপদ পণ্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করবেন। যথাযথ বাজার ব্যবস্থার অভাব এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাবে কৃষকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে ভোক্তারাও সাশ্রয়ী মূল্যে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কৃষকের বাজারের মাধ্যমে উভয়পক্ষই উপকৃত হবেন এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
আজ ১৬ জুন ২০২২ সকাল ১১.০০ টায় বনানীর একটি হোটেলে এ্যাম্বেসি অব দি কিংডম অব দি নেদারল্যান্ডস, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের প্রারম্ভিক সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সেলিম রেজা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেন. মো জোবায়দুর রহমান, এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী। আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড ২-এর কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী, অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান এবং মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঢাকা মহানগরে ১৬টি কৃষকের বাজার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে নতুন ৫টি (৬নং ওয়ার্ডসহ মোট ৬টি) কৃষকের বাজার স্থাপিত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, সিভিল সোসাইটি, মিডিয়াসহ সকল অংশীদারদের সহযোগিতা কামনা করছি।
অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, কৃষকের বাজারের সাথে প্রযুক্তিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। অনলাইনে কৃষকের বাজারের সেবা নিশ্চিত করা হলে জনগণ উপকৃত হবেন। অঞ্চল-২ এর পক্ষ থেকে আমরা কৃষকের বাজার পরিদর্শন করবো এবং এ উদ্যোগটি সফল করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবো। অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল বাকী বলেন, জনগণের কাছে কৃষকের বাজার কার্যক্রমটি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য প্রচারণা অত্যন্ত জরুরি। মাছ-মাংসের জন্য সরাসরি মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা হলে সফলতা আসবে। ওয়ার্ড ১৯ এ খুব সহজেই কৃষকের বাজার স্থাপন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্ভব। অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, কৃষকের বাজার কার্যক্রমটি হাট-বাজার আইনের আওতায় চলে আসে। আইন মেনে এ কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
ওয়ার্ড ২-এর সাধারণ কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নিরাপদ খাদ্য পণ্য ক্রয়ে আমরা প্রত্যেকেই আগ্রহী। আমাদের ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় স্থান ও সুবিধাদি দেয়া সম্ভব। এ বাজারে যেন কোন ধরণের চাঁদাবাজি না হয় তা কাউন্সিলর অফিস থেকে নিশ্চিত করা হবে। ওয়ার্ড ২৬,২৭,২৮ এর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হামিদা আকতার মিতা এবং ওয়ার্ড ১৯,২০,২১ এর সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আমেনা বেগম সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেন. মো জোবায়দুর রহমান বলেন, সুস্থ সবল জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিরলস কাজ করছেন। আমাদের ফল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধির হার ১১% এর বেশি। উৎপাদনে এগিয়ে থাকলেও আমরা পরিবহন, বিপণন, সংরক্ষণে আমরা পিছিয়ে আছি বহুগুণে। সঠিক বাজার ব্যবস্থার অভাবে কৃষকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষকের বাজারের মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের সরিয়ে কৃষকদের উপকৃত করা সম্ভব। এ উদ্যোগটি ছোট হলেও সুদূরপ্রসারী। ৬টি ওয়ার্ড থেকে উৎসাহিত হয়ে ৫৪টি ওয়ার্ডে উদ্যোগটি বিস্তৃত করা সম্ভব।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সেলিম রেজা বলেন, কর্পোরেট কালচারের কারণে আমাদের কৃষি এবং খাদ্য গ্রহণের ধরণ পরিবর্তন হয়ে গেছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় অসৎ কার্যক্রম এবং শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনকে প্রাধান্য দেয়ার কারণে আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ১,২,১৯,৩০,৩৩ নং ওয়ার্ডে কৃষকের বাজার স্থাপনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, ওয়ার্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এ বাজারে নিরাপদ খাদ্যপণ্য নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের পক্ষ থেকে মনিটরিং থাকবে।
এলাকাভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের প্রারম্ভিক সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সাসটেইনেবেল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট জাহাঙ্গীর হোসেন, ফ্রেশ মার্কেট ট্রেইনার এসকে মোহিবুল্লাহ, ঢাকা উত্তরের সিটি ফুড কোঅর্ডিনেটর নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ন-সম্পাদক মিহির বিশ^াস, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর এর অতিরিক্ত উপপরিচালক মোঃ গোলাম হাসান মজুমদার, ঢাকা জেলা মৎস কর্মকর্তা বিএ মোস্তফা কামাল, ইউএনডিপি’র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মান উন্নয়ন কর্মসূচির ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের টাউন ম্যানেজার মারুফ রহমানসহ আরো অনেকে।