English | Bangla
৩৮ বছরে জলাভূমি কমেছে ৬৫ লাখ হেক্টর

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন: শনিবার বিশ্ব জলাভূমি দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

জাতিসংঘের আয়োজনে ১৯৯৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশ্বের জলাভূমির সংরক্ষণে জাতিসংঘের আয়োজনে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার বিশেষ সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে গৃহীত স্মারকে বাংলাদেশও স্বাক্ষর করে। সেই থেকে প্রতিবছর ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হচ্ছে।
জীবন ও জীব-বৈচিত্র সুরক্ষায় জলাভূমি ও এর পানির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এ আহ্বানের মধ্য দিয়ে এ বছর দিবসটি পালন করা হবে। এ বছর এ দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জলাভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনা।’
জলাভূমি নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় গত ৩৮ বছরে দেশের জলাভূমি কমেছে ৬৫ লাখ হেক্টর। জলাভূমি ভরাট হয়ে শহর থেকে বৃষ্টির পানিনিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। পানিনিষ্কাশন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ঢাকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাড্ডা, সাঁতারকুল, খিলক্ষেত, রামপুরা, দক্ষিণ ও উত্তরখানের বেশিরভাগ এলাকা একসময় জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চল ছিল। গত এক যুগে এই জলাভূমি ও নিম্নাঞ্চলের ৯০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। 
ঢাকা সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকায় কিছু সবুজ বনানী, কৃষিজমি ও জলাশয় থাকলেও তা ধ্বংস হচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। এক যুগ আগেও সাভার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ জমি ছিল সবুজে ঢাকা, ছিল নদী ও জলাশয়। এক যুগে নগরায়ণ ও উন্নয়নের নামে এলাকাগুলো ধূসর এলাকায় পরিণত হয়েছে।
ঢাকা মহানগরের ৩৫৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মাত্র ৩৫ বর্গকিলোমিটার, আর জলাভূমির পরিমাণ ৭০ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে আবার রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, সংসদ ভবন লেক, ধানমণ্ডি, উত্তরা, বনানী, গুলশান লেকসহ মোট ১০টি পার্ক ও লেক মিলিয়ে ২০ কিলোমিটার এলাকা রয়েছে। এক যুগ আগেও ঢাকায় সবুজ এলাকা ছিল প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার, আর জলাভূমি ছিল ১০০ কিলোমিটারের বেশি। ২০০৫ সালে বাড্ডায় জলাভূমির পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৮৬ বর্গকিলোমিটার। ২০১০ সালে তা কমে হয় ৩ দশমিক ৯৫ বর্গ।
ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকার জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ ৪৭ খাল। কর্তৃপক্ষের আপোষী মনোভাবে ইতিমধ্যে ৪৭ থেকে ৪৩, ৪৩ থেকে ৩৭টি খালের অস্তিত আজ কাগজে কলমে বিদ্যমান। আবার কাগজের অনেক খালের অবস্থান আজ ভূমিদস্যুর শপিংমল, বৃহৎ অট্টলিকা কিংবা ঋণ বাণিজ্যিক দাতাগোষ্ঠীর পরিকল্পনায় উন্নয়নের নামে ড্রেন, রাস্তাঘাট কিংবা বক্সকালবার্টের নিচে অবস্থান নিয়েছে। অট্টালিকা, মার্কেটের ফাঁদে ঢাকা শহর এখন প্রায় পুকুর শূন্য হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির দোহাই দিয়ে নদীগুলো শিল্প কারখানার বর্জ্য আর দখলে আজ মৃত। বর্ষায় ঢাকার চারপাশের যে নিচু জলাভূমি ছিল তা আজ বিভিন্ন আবাসিক কোম্পানি আর রাজউকের উন্নয়নের বলি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
সারাদেশের জলাধার রক্ষার জন্য সব নাগরিককে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের সব নাগরিকের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।
http://www.banglamail24.com/index.php?ref=ZGV0YWlscy0yMDEzXzAyXzAyLTkwLTIwOTQ2