English | Bangla
বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চিহ্নিত মাঠ-পার্ক-উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণে দ্রুত উদ্যোগ জরুরি

ঢাকার উভয় সিটি কর্পোরেশনেই মাঠ-পার্কের ঘাটতি রয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে কোন খেলার মাঠ নেই। অথচ প্রতি সাড়ে বারো হাজার মানুষের জন্য ২-৩টি খেলার মাঠ দরকার। এ বিষয়টি বিবেচনায় বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় ৫টি আঞ্চলিক পার্ক, ৫৫টি জলকেন্দ্রিক পার্ক, ১৪টি ইকোপার্ক, এবং ১১টি অন্যান্য পার্ক তৈরির প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। ড্যাপে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত থাকা স্বত্বেও বিভিন্ন মাঠ-পার্ক-জলাশয়-ঝিল দখলদারিত্বের শিকার হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে।
আজ ২৯  ফেব্রুয়ারি  ২০২৪, বৃহস্পতিবার, সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে আয়োজিত ‘বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় চিহ্নিত মাঠ-পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় এবং পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম, আইপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, আরডিআরসি’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র আইনজীবি মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব।
মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, মহানগরী, বিভাগীয় এবং জেলা শহরসহ দেশের সব শহরাঞ্চলের খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ অনুযায়ী, মাস্টারপ্ল্যানে মাঠ-উদ্যান বা জলাশয় হিসেবে চিহ্নিত থাকলে কোন অবস্থাতেই এর চরিত্র পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু এ আইন প্রতিনিয়ত ভঙ্গ হচ্ছে। জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ এ বলা হয়েছে, অবশ্যই শিশুদের জন্য খেলার মাঠের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বও সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে বেশির ভাগ স্কুলে খেলার মাঠ নেই। স্কুলের মাঠ ছাড়া কোন বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়া থাকা বিরত থাকতে হবে। হাইকোর্ট এ বছরের শুরুতেই ঢাকা শহরের সকল মাঠ-পার্কের তালিকা তৈরি, বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ, এবং সকলের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের নির্দেশনা প্রদান করেছে। আমাদের প্রত্যাশা এর মাধ্যমে নাগরিকরা উপকৃত হবেন।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকার ১২০ কিলোমিটার খালের নেটওয়ার্ক হারিয়ে গেছে। খালগুলোকে দখলমুক্ত করে নগরকৃষিকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে নগর দারিদ্র্য হ্রাসে ভ‚মিকা রাখা সম্ভব। খাল পুনরুদ্ধারে সিটি কর্পোরেশন সচেষ্ট হয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ ধরণের কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা জরুরি। সেই সাথে ঢাকা শহরের সকল মাঠ-পার্কে ইজারা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে খাস জায়গা রয়েছে। এ জায়গাগুলো সামাজিকীকরণ ও খেলাধূলার স্থানে পরিণত করা যেতে পারে।
ড. মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরের মাত্র ১৬% মানুষের খেলার মাঠে প্রবেশগম্যতা রয়েছে। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় উল্লেখিত ৬টি অঞ্চলে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আঞ্চলিক পার্ক আছে। বাকি ৫টি অঞ্চলে কোন আঞ্চলিক পার্ক নেই। ঢাকা মহানগরে উন্মুক্ত স্থান ১% এর নিচে। ড্যাপে বলা হয়েছে, ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্লকের আয়তন অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট শতাংশ এলাকা উন্মুক্ত স্থানের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। রাজউক থেকে কেরাণীগঞ্জ, পূবাইলে পার্ক তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলেই হবে না, বরং সকলের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হতে হবে।  
মাকসুদ হাসেম বলেন, গণপরিসর বা পাবলিক স্পেস এর ম্যানেজমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাবলিক স্পেসগুলোকে সম্পূর্ণভাবে ঘেরাও করে ফেলা উচিত নয়। এর মাধ্যমে মাদক সেবন, বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের আশঙ্কা বাড়ে। এলাকার বিদ্যালয়ের মাঠগুলোকে এলাকাবাসীর ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হলে এলাকাবাসীকে উপকৃত করা সম্ভব। সেই সাথে আমাদের ফ্লাইওভারের নিচে যে জায়গাগুলো আছে আমরা তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। গণপরিসর সংক্রান্ত একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে গণপরিসর চিহ্নিত করা, ব্যবস্থাপনা, প্রবেশগম্যতা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে কাজ করা অনেক বেশি সহজ হবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের নগর পরিকল্পনায় শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা নারীদের চাহিদার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নেয়া হয় না। আমরা শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশকে গুরুত্ব দিচ্ছি না বরং খেলার মাঠগুলোকে বাণিজ্যিকীকরণ করছি। বয়োবৃদ্ধরাও ঘরে আটকে থেকে বন্দি জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছেন। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গড়ে তুলতে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
আয়োজনে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এম এ মান্নান মনির, ধানমন্ডি কচিকন্ঠ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এইচ এম নুরুল ইসলাম, তেঁতুলতলা মাঠ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয় কর্মী সৈয়দা রত্না, সিএলপিএ ট্রাস্ট এর পলিসি অফিসার কামরুন্নেসা মুন্না, শিশুদের মুক্তবায়ু সেবন সংস্থার মোঃ সেলিম, সিডিপি’র মেরিনা আক্তার, লাইফ সার্ভ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ আজাদ হোসেন, আইসেক এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ রেজায়ে রাব্বি জায়েদসহ আরো অনেকে।