English | Bangla
নগরে সকলের উপযোগী পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করার দাবী

মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট অত্যন্ত জরুরী। ঢাকা শহরে পাবলিক টয়লেটের অপর্যাপ্ততার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্ন রকম স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভূগছে। যা পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর প্রভাব ফেলছে। জনগনের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে জনসমাগমস্থলে পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করতে হবে। সেই সকল পাবলিক টয়লেটে নারী, প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে। আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টসহ ১৩টি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধনে বক্তরা বলেন।
 
বক্তারা বলেন, চাকুরি, ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানাবিধ প্রয়োজনে ঢাকায় প্রতিদির প্রায় এক কোটি মানুষ বাসা থেকে বের হয়। অধিকাংশ মানুষেরই মল-মূত্র ত্যাগের জন্য শৌচাগার প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদার তুলনায় শৌচাগারের সংখ্যা খুবই কম। যেগুলো রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও ব্যবহারের অনুপযোগী। ফলে মানুষ বেশি সময় ধরে প্রস্্রাব, পায়খানা আটকে রেখে কিডনিজনিত রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে, নারী, প্রতিবন্ধীদের শৌচাগার ব্যবহারে আলাদা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। দেশের গুটিকয়েক পাবলিক টয়লেট ব্যতিত বেশীরভাগই অপরিচ্ছন্ন এবং অনিরাপদ। তাছাড়া স্বল্পতা ও সাধারণ মানুষের কাছে অভিগম্যতা কম। যার কারণে একদিকে যত্র-তত্র মল-মূত্র ত্যাগের ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, অপরদিকে তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক বার “টয়লেট” ব্যবহার করার কারণে নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভূগছে নারীরা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১০% প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থাকলেও পাবলিক টয়লেটগুলোতে তাদের জন্য কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেই।
 
বক্তরা আরো বলেন, ঢাকায় বর্তমানে ৬৯টি গণশৌচাগার রয়েছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ঢাকা সিটি করপোরেশনের জায়গার অভাবে নতুন গণশৌচাগার নির্মাণ সময় সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ও সেবা প্রদানকারী সংস্থার ভবন ও জনসমাগম স্থানের শৌচাগারগুলোকে পাবলিক টয়লেট হিসাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা যেতে পারে। যেমন জনগুরুত্বপূর্ণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ ভবনসমূহ ব্যতিত নগরে বিপণী বিতান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সরকারি বিভিন্ন ভবন, খেলার মাঠ, পার্কের শৌচাগারগুলো সকলের ব্যবহারের জন্য সিটি করপোরেশন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া নারী ও প্রতিবন্ধীদের সমতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে সবস্থানের শৌচাগারগুলোতে তাদের জন্য আলাদা শৌচাগার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে ও নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন ও সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, সহকারি ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার তানজিলা চৌধুরী, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ এর কর্মকর্তা শাহ দীপক কুমার, গ্রীন মাইন্ড সোসাইাটর নির্বাহী পরিচালক আমির হোসেন, প্রত্যাশা মাদক রিবোধী সংগঠনের মহাসচিব হেলাল আহমেদ, বিসিএইচআরডি এর নির্বাহী পরিচালক মোঃ মাহবুল হক, স্বদেশ মৃক্তিকার এর নির্বাহী পরিচালক আকবর হোসেন, মাস্তুলের সদস্যা নিশান মনির, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রিফাত পাশা, নারী নেত্রী ক্যামেলিয়া চৌধুরী প্রমূখ। এছাড়া মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এর প্রধান শিক্ষক মান্নœান মনির, এডভোকেট সুলতান মাহমুদ বান্না, ওয়ার্ক ফর এ বটোর বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার দৈয়দা অনন্যা রহমান প্রমূখ। 
 
সভায় পাবলিক টয়লেট বিষয়ক সুষ্ঠু নীতিমালা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে পাবলিক টয়লেট নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করা। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ন/জনসমাগমস্থানে মহিলা, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যাক্তিদের জন্য আলাদা টয়লেট নিশ্চিত করা। পাবলিক টয়লেটগুলো যাতে করে মানুষ সহজে খুজে পায় এমন জায়গায় স্থাপন এবং আশে-পাশের রাস্তায় পাবলিক টয়লেটের সাংকেতিক চিহ্ন সম্বলিত সাইনবোর্ড প্রদান করা। পাবলিক টয়লেট না থাকলে বা মানসম্মত না হলে, সহজে অভিযোগ প্রদানের ব্যবস্থা ও প্রয়োজনে দোষীদের শাস্তি এবং জরিমানা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।