English | Bangla
বৈশাখী খেলার মাঠ শিশুবান্ধব গড়ে তুলতে মাইনক্রাফট কর্মশালা
রায়েরবাজার ৩৪ নং ওয়ার্ডের ২ লক্ষ ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একমাত্র খেলাধূলার স্থান হলো বৈশাখী খেলার মাঠ। কিন্তু এ মাঠে নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ করে ৫ বছরের নিচের বয়সের শিশুরা খেলাধুলার কোন সুযোগ পায় না। পার্ক ও খেলার মাঠসমূহ নগরবাসীর সামাজিকীকরণ, বিনোদন, খেলাধুলা, মানসিক প্রশান্তি এবং শরীরচর্চার ক্ষেত্র। কাজেই এ মাঠটিকে সকলের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। খেলার মাঠ বা পার্ক যারা ব্যবহার করে তাদের, বিশেষ করে শিশুদের চাহিদাগুলো মাঠের উন্নয়নে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই একমাত্র একটি মাঠের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে। 
 
এ প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে হেল্থব্রিজ-কানাডা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, ব্লক বাই ব্লক এবং ইউএনহ্যাবিটেট সম্মিলিতভাবে রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠকে শিশুবান্ধব করার উদ্দেশ্যে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে মাইনক্রাফ্ট কর্মশালা আয়োজন করেছে। মাইনক্রাফ্ট মূলত পৃথিবী বিখ্যাত একটি খেলা। যার মাধ্যমে যে কোন নকশা তৈরি করা সম্ভব। রায়েরবাজার এলাকাবাসী এর মাধ্যমে বৈশাখী খেলার মাঠটিকে কিভাবে দেখতে চায় তার নকশা প্রণয়ন করবে। এ উদ্দেশ্যে ১১ এপ্রিল সকাল ৯.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে তিন দিনব্যাপী রায়েরবাজার এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ কর্মশালার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।  
 
কর্মশালায় সূচনা বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই বৈশাখী খেলার মাঠটিকে শিশুবান্ধব এবং সকলের জন্য প্রবেশগম্য করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এলাকাবাসীর স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ মাঠটিকে উন্নয়ন করা সম্ভব। তিন দিনব্যাপী এ কর্মশালায় আমরা বৈশাখী মাঠকে সবার জন্য বিশেষ করে শিশু, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য নকশা তৈরির চেষ্টা করবো। 
ভিত্তি স্থপতি বৃন্দের পরিচালক ইশতিয়াক জহির বলেন, স্থপতি বা নগর পরিকল্পনাবিদরা এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা না করেই নকশা করে ফেলেন। ফলে এলাকাবাসীর চাহিদার প্রতিফলন থাকে না। মাইনক্রাফ্ট কর্মশালার মাধ্যমে এলাকাবাসী, বিশেষ করে শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা তাদের এলাকা এবং চাহিদা সম্পর্কে যতটা জানে, আমরা তা জানি না। ফলে তাদের কাছ থেকে আমরা যে উপাত্ত পাবো, তা বৈশাখী খেলার মাঠের নকশা তৈরি করতে আমাদের সহায়তা করবে। পরবর্তীতে মাঠ-পার্কসমূহ উন্নয়নে আমরা একই পদ্ধতি অবলম্বন করবো।
 
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ডেপুটী টাউন প্ল্যানার হাসিবুল কবীর বলেন, মাইনক্রাফ্ট কর্মশালার এ আয়োজনটি অত্যন্ত চমৎকার। কারণ এলাকাবাসী, বিশেষত শিশুদের চাহিদার কোন প্রতিফলন পরিকল্পনায় থাকে না বিধায় আজকে ঢাকা শহর বসবাস অযোগ্য শহরে পরিণত হয়েছে। আমরা যেভাবে পরিকল্পনা করছি, তাতে সুবিধাভোগী জনগণের সংখ্যা কম। মাইনক্রাফট এর মাধ্যমে শিশুরা যে নকশা তৈরি করবে আমরা তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবো। 
 
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ বলেন, পার্ক বা খেলার মাঠ উন্নয়নে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণ আমাদের কাছে একদম নতুন একটি বিষয়, যা প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা এ কর্মশালা থেকে যে নকশা পাবো তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। এ মাঠের উন্নয়নের পাশাপাশি এলাকাবাসীকে এর রক্ষণাবেক্ষণেও ভূমিকা রাখতে হবে। 
 
ইউএনহ্যাবিটেট এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারী এবং গণপরিসর বিশেষজ্ঞ সোহেল রানা বলেন, আমরা  গণপরিসর উন্নয়নে ভিন্নধর্মী কিছু করার প্রত্যয় থেকেই মাইনক্রাফ্ট গেম ব্যবহার শুরু করি। বিশ্বের ৫০টি দেশে আমরা কাজ করেছি। বাংলাদেশে এটি আমাদের দ্বিতীয় কাজ। এ কর্মশালায় আমরা বৈশাখী খেলার মাঠের বিভিন্ন সমস্যা, সেগুলোর সমাধান খুঁজে বের করবো। পাশাপাশি এলাকাবাসী মাঠে কি দেখতে চান তার একটি নকশা তৈরি করবেন। আমরা সফল হলে অন্যান্য পার্ক খেলার মাঠ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একই প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে। 
 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন। অংশগ্রহণকারীদের মাইনক্রাফ্ট খেলাটির মাধ্যমে নকশা তৈরি করতে শেখানো হবে। এজন্য মাইনক্র্যাফট বিশেষজ্ঞ ইউহেনিও ইযাসটেলাম সহায়ক হিসেবে কাজ করবেন।  ইতিপূর্বে অংশগ্রহণমূলক মতবিনিময়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা বা নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে মাইনক্র্যাফট গেম ব্যবহার করে নকশা প্রণয়ন করার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী সরঞ্জাম, অবকাঠামো বা অলংকরণের কাজটি নিজেরাই করতে পারবেন। এতে করে তাদের মতামতকে বাস্তব আকার দিয়ে সংশ্লিষ্ট নিকট উপস্থাপন করতে পারবেন। কর্মশালায় রায়েরবাজার এলাকার শিশু-কিশোর, বয়োজ্যেষ্ঠ, পেশাজীবি, রাজনৈতিক কর্মী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ ভিত্তি স্থপতি বৃন্দের ১২ জন স্থপতি এবং পরিকল্পনাবিদ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিং এর কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন।