English | Bangla
সুস্থতা ও সামাজিকীকরণে পাবলিক প্লেস তৈরির আহ্বান
ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠ/পার্ক নেই। যা নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে অন্তরায়। পাশাপাশি পাবলিক প্লেস এর স্বল্পতার কারণে সামাজিকীকরণের সুযোগও সীমিত হয়ে পড়েছে। প্রতিটি এলাকায় বাসার পাশে ছোট আকারে অব্যবহৃত স্থানসমূহে পাবলিক প্লেস তৈরি করা হলে সামাজিকীকরণে নগরবাসীর জন্য বাড়তি একটি সুবিধা হবে। তবে এগুলি পার্ক ও খেলার মাঠের বিকল্প নয়। এজন্য ছোট ছোট এ সকল পাবলিক প্লেস এর পাশাপাশি ধাপে ধাপে বিভিন্ন আকারের খেলার মাঠ/পার্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ এলাকা, শহর এবং অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন আকারের খেলার মাঠ/পার্ক থাকবে। সকল ক্ষেত্রেই শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও বয়োজ্যেষ্ঠ এবং সকল আয়ের মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার সকাল ১১.০০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এর যৌথ উদ্যোগে “নগরে এলাকাভিত্তিক উন্মূক্ত পাবলিক প্লেস তৈরির প্রস্তাব” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এর ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০টি অঞ্চলের মধ্য থেকে খেলার মাঠ/পার্ক নেই অথবা তুলনামূলক কম সে রকম ওয়ার্ড হতে ১০টি স্থান বাছাই করে হয়েছে। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় ছোট আকারের পাবলিক প্লেস তৈরি করে এলাকাবাসীকে নির্মল বিনোদনের সুযোগ তৈরি করে দেয়া সম্ভব। 
 
মতবিনিময় সভায় গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম, নাসিম হাসান এবং জুনায়েত আহমেদ তালুকদার। তারা বলেন, ৯৩.৩৩ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন এলাকায় ছোট আকারের পাবলিক প্লেস তৈরি করা হলে সেখানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা বাছাইকৃত ১০টি স্থানের মধ্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় টিপু সুলতান রোডের গোয়াল ঘাট পানির পাম্প সংলগ্ন একটি স্থানকে কেন্দ্র করে নকশা তৈরি করেছেন। সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সফল উদাহরণ তৈরি করা গেলে শহরের এ রকম অনেক জায়গা খুঁজে বের করে তার আদলে পাবলিক প্লেস তৈরি করা যাবে।
 
পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউট এর পরিচালক ড. সারওয়ার জাহান বলেন, এলাকা ভিত্তিক পাবলিক প্লেস তৈরির ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ সকল পাবলিক প্লেস কারা ব্যবহার করবে, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে কারা থাকবেন এবং এই ধরনের স্থানগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। বিশেষ করে স্থানীয় এলাকার মানুষকে এর সাথে বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। 
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এর উপদেষ্টা ড. গোলাম রহমান বলেন, বিশ্বের অনেক শহরে এলাকা ভিত্তিক ছোট আকারের পাবলিক প্লেস রয়েছে। আমাদের দেশেও এই ধরনের পাবলিক প্লেস তৈরি করা সম্ভব। সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। 
 
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. তারিক বিন ইউসুফ বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ইতিমধ্যে পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে রাজউকও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা এবং সদিচ্ছা প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশনের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এলাকা ভিত্তিক এই ধরনের পাবলিক প্লেস তৈরি চিন্তা প্রশংসনীয়। তিনি গবেষণার আওতায় উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫ টি স্থানের এ ধরনের পাবলিক প্লেস তৈরির প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই এলাকা ভিত্তিক নির্মল বিনোদনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ সকল স্থান নারী শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের জন্য উন্মুক্ত হতে হবে এবং বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা যাবে না। 
মতবিনিময় সভায় সভপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. শাকিল আকতার বলেন, এলাকা ভিত্তিক ছোট আকারের পাবলিক প্লেস তৈরি করতে গিয়ে শহরের পার্ক ও খেলার মাঠসমূহকে অবহেলা করা যাবে না। এ ধরনের পাবলিক প্লেস তৈরিতে অর্থ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেক্ষেত্রে এলাকাবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর সহকারী নগর পরিকল্পনাবীদ নবায়ন খীসা, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হেলাল আহমেদ, স্কোপ এর নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন, বিসিএইচআরডি এর মাহবুবুল হক প্রমুখ।