English | Bangla
মানবাধিকার নিশ্চিতে রিকশা শিল্প রক্ষার আহ্বান
শিশু, নারী, ব্দ্ধৃ, অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীব্যক্তিসহ সকল শ্রেণীর মানুষের যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিকশা সবচেয়ে সহজলভ্য বাহন। তা স্বত্বেও পরিবেশবান্ধব রিকশাকে সুবিধার পরিবর্তে কেবলমাত্র সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। দেশের কয়েক লক্ষ শ্রমিক রিকশা পেশার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার পরও রিকশা চালকরা শ্রমিক হিসেবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। রিকশা চলাচল বন্ধ করলে একদিকে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ যেমন যাতায়াত সমস্যার সম্মুখীন হবেন, অপরদিকে একটি বিশাল সংখ্যক লোক বেকার হয়ে পড়বে। যা চালক এবং যাত্রীর উভয় এরই মানবাধিকার বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি যান্ত্রিক যানের উপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে পরিবেশ দূষণ ও যানজট বাড়বে। ৮ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার, সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এবং ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিং এর যৌথ উদ্যোগে “রিকশা শিল্প: মানবাধিকার প্রেক্ষাপট” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
আলোচনা সভায় এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী অ্যানথ্রোপলজিস্ট এ্যানামিক প্রিন্স মূল প্রবন্ধে বলেন, রিকশার বিষয়ে যখনই আলোচনা হয় তখন দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়। একটি হচ্ছে বিকল্প পেশায় পুনর্বাসন। অপরটি হচ্ছে রিকশাকে এলাকাভিত্তিক বাহনে পরিণত করা। কিন্তু এ দুটি ক্ষেত্রে যে সকল সমস্যা সৃষ্টি হবে তা আলোচনা করা হয় না। রিকশা শিল্পের সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন: তুলনামূলক বেশি ও তাৎক্ষণিক আয়, পেশার স্বাধীনতা এবং গ্রাম ও শহরাঞ্চল উভয় ক্ষেত্রেই উপার্জনের সুযোগ। কিন্তু বিকল্প পেশায় তাদের নিয়োজিত করলে এই ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে না। অপর দিকে এলাকা ভিত্তিক বাহনে রূপান্তর করা হলে যাতায়াতে প্রতিবন্ধকতা, নি¤œ আয়ের এলাকায় বেকারত্ব বৃদ্ধি, কালোবাজারে লাইসেন্স নেয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। 
আন্তর্জাতিক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুবুল বারী বলেন, রিকশা ডোর টু ডোর সেবা প্রদান করে থাকে। রিকশাকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রধান্য দিয়ে মেগা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে যাতায়াত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় জায়গা বেশি নিয়ে কম সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করে। অপরদিকে রিকশা একটি ব্যক্তিগত গাড়ির চেয়ে প্রায় ৪৮ গুণ বেশি সেবা প্রদান করে থাকে। রিকশার জন্য আলাদা লেন এর ব্যবস্থা করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।  
 
নারীবান্ধব পরিবহন বিশেষজ্ঞ স্থপতি সালমা এ শফী বলেন, রিকশা আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থার সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। রিকশাকে ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা হলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনি সরকারও এর দ্বারা উপকৃত হবে। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট এর সাধারন সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, রিকশা আমাদের প্রয়োজনীয় একটি বাহন অথচ রিকশা চালকরা সমাজের প্রান্তিক অংশে বাস করছে। রিকশা চালকরা প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকা গ্রামে পাঠান। যা কৃষির উন্নয়নে কাজে লাগে। কাজেই রিকশা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। 
 
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর সাধারন সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রিকশাকে কেন্দ্র করে সমন্বিত যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশবান্ধব যান রিকশাকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রধান্য দিলে নগর যাতায়াত ব্যবস্থায় কোন সুফল পাওয়া যাবে না। ইনস্টিটিউট অফ ওয়েলবিং এর নির্বাহী পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, বর্তমানে অনেক শহর গাড়িকে আধুনিক বাহন মনে করছেন না। কারণ গাড়ি দূষণ, যানজট এবং দূর্ঘটনা ঘটায়। আর আমরা চলছি উল্টো পথে। পরিবেশবান্ধব যান রিকশাকে সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে একে নিয়ন্ত্রণ করে গাড়িকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, রিকশা আমাদের দেশের ঐতিহ্য। রিকশা সকল শ্রেণীর মানুষকে সেবা প্রদান করতে সক্ষম। এর মাধ্যমে যেমন যাতায়াত চাহিদা পূরণ করা সম্ভব, তেমনি বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা যায়। কাজেই সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় রিকশাকে ব্যবস্থাপনায় আনা প্রয়োজন। 
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন এর সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৫ নং ওয়ার্ড এর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল কাদের, রিকশা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মোঃ রেজাউল করিম,বাঁচতে শিখ নারী এর নির্বাহী পরিচালক আফরোজা বেগম এবং রিকশা চালক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধিগণ।