English | Bangla
তামাকের দূর্বল কর কাঠামো তামাক কোম্পানীকে লাভবান করছে
তামাকের দূর্বল কর কাঠামো তামাক কোম্পানীকে লাভবান করছে ০৯ নভেম্বর, ২০২০। বিকাল: ০৩:০০টা। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সম্মেলন কক্ষ স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের আয়োজনে  “তামাকের উপর কর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে এর সুফল” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো: শাহাদৎ হোসেন মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ, ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিস এর হেড অফ প্রোগ্রাম মোঃ শফিকুল ইসলাম, পরিচালক-গবেষণা (উপসচিব) ড. মোঃ নুরুল আমিন,  জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র প্রোগ্রাম অফিসার আমিনুল ইসলাম সুজন,  দি ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, তামাক নিয়ন্ত্রণ ও গণমাধ্যমকর্মী সুশান্ত সিনহা প্রমুখ। ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ব্যুরো অফ ইকোনোমিক রিসার্চের এর ফোকাল পার্সন অধ্যাপক ড. রুমানা হক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
 
মূল প্রবন্ধে ড. রুমানা হক বলেন, তামাকের উপর কর বৃদ্ধি তামাক নিয়ন্ত্রণের অন্যতম মাধ্যম। দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর তামাকের উপর কর বৃদ্ধি করে তামাক নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ ফল পেয়েছে।  বাংলাদেশে ১৫ বছরের উর্ধ্বে ৩৫ ভাগ মানুষ তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। করোনা ভাইরাসের এ সময় তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান তামাকের কর কাঠামো খুবই দুর্বল। এই কর কাঠামো শুধুই তামাক ব্যবসায়ীদের লাভবান করছে। কিন্তু সরকার প্রত্যাশা অনুসারে কর পাচ্ছে না। তামাকের উপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করলে সরকার প্রতিবছর বর্তমান আদায়কৃত কর থেকেও অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা কর আদায় করতে পারবে।
 
ড. মো: শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ বলেন, পৃথিবীতে তামাকের কারণে ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়। তামাক কোনভাবেই কারো জন্য লাভজনক পণ্য নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছেন। এই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাকের কর এখনই কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। তামাকের বিরুদ্ধে সকলের সম্মিলিত যুদ্ধ শুরু করতে হবে। 
 
ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ খুব কঠোরভাবে পালন করতে হবে। কারণ তামাক কোম্পানী তামাক নিয়ন্ত্রণ, কর বৃদ্ধি, তামাক আইন বাস্তবায়নসহ সকল ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। তামাকের কর আদায়ে রাজস্ব বিভাগের আরো বেশি সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। 
 
এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের দেশের ক্যান্সারের আক্রান্ত হবার অন্যতম কারণ তামাক। তামাক কোম্পানীগুলো বিভিন্নভাবে সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। আমাদের তামাকের অর্জিত  আদায়কৃত কর থেকে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় অনেক বেশি। এটি আমাদের বিবেচনা করেই তামাকের কর বৃদ্ধি করতে হবে। 
 
সুশান্ত সিনহা বলেন, দুর্বল কর কাঠামোর ফলে দেশে তামাক ব্যবসায়ীদের মুনাফা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১০ বছরে বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর উৎপাদন দ্বিগুণ হলেও মুনাফা বেড়ে ৫গুণ হয়েছে। সেই অনুপাতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পায়নি। সঠিক করনীতি প্রয়োগ হলে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। 
 
গাউস পিয়ারী বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে কর বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তামাকের উপর সুনির্দিষ্ট কর বৃদ্ধি হলে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমবে। কিন্তু সরকারের অধিক রাজস্ব আদায় হবে। দেশের নীতি নিধারণী পর্যায়ে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ থাকায় একটি কার্যকর তামাক কর কাঠামো তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান কর কাঠামোর ফলে সরকার কাঙ্খিত রাজস্ব পায় না বরং কোম্পানীর স্বার্থরক্ষা হচ্ছে। 
 
আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, টিসিআরসি, বিইআর, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।