English | Bangla
কর ফাঁকি রোধে তামাকের কর আদায় ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করতে হবে

তামাক খাত ব্যতিরেকে অন্যান্য ক্ষেত্রে কর আদায়ের পদ্ধতি সহজ ও যুগোপযোগীকরণে বাংলাদেশ সরকার কর ব্যবস্থাপনাকে বহুলাংশে ডিজিটালাইজড করেছে। কিন্তু তামাক কর আদায়ে এখনও সেই আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। তামাকজাত দ্রব্যের কর আদায়ের মাধ্যম হিসাবে প্রচলিত ব্যান্ডরোল/ট্যাক্স স্ট্যাম্প ব্যবহারের ক্ষেত্রে শক্তিশালী বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। ফলে কোম্পানিগুলো বড় অংকের কর ফাঁকি দিচ্ছে। তামাক কোম্পানি কর্তৃক কর ফাঁকি রোধে আদায় ব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করা প্রয়োজন।

২৪ মে, ২০২১, সোমবার, সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব), ট্যোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র সমন্বিত উদ্যোগে ‘তামাক কর বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক অনলাইন সভার মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা এ দাবী জানান।

বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষা নিরোধ কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর উপদেষ্টা মোজাফফর হোসেন পল্টু এর সভাপতিতে¦ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা ২ আসনের বর্তমান মাননীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক খাদ্য মন্ত্রী এড. মোঃ কামরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য এবং সাবেক চিফ হুইপ মোঃ আব্দুস শহীদ, বগুড়া ৩ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মোঃ নুরুল ইসলাম তালুকদার, গাইবান্ধা ১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি, সংরক্ষিত নারী আসন ৩৩৭ এর মাননীয় সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতা, সাইফুদ্দিন আহমেদ (সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট), দ্যা ইউনিয়নের কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাবিøউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডাবিøউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।

স্বাগত বক্তব্যে সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের মূল উদ্দেশ্য তামাক সেবনকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা আর নতুনদের তামাক থেকে বিরত রাখা। মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তামাক নিয়ন্ত্রনে কর বৃদ্ধি একটি কার্যকর উপায়। কিন্তু তামাকজাত পণ্যের বর্তমান কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল, বহুস্তরবিশিষ্ট এবং এর ব্যবস্থাপনাও কার্যকর নয়। এতে করে তামাক কোম্পানি কর্তৃক কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ তৈরী হচ্ছে এবং সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।  

মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, তামাকের ট্যাক্স মনিটরিং ব্যবস্থায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলে করদাতার তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে করের হার বাড়ানো, সাপ্লাই চেইন সম্বন্ধে সঠিক ধারনা পাওয়া যাবে। এতে করে, কোম্পানির কর ফাঁকি রোধ করাসহ অতিরিক্ত রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ট্যাক্স আদায় প্রক্রিয়াটি আরো সহজতর করা সম্ভব হবে।

মো: আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, তামাকের কারণে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সরকারকে এই খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরারব পেশ করতে হবে। পাশাপাশি তামাকের সর্বোচ্চ মূল্য ও কর বৃদ্ধি করে তামাকজাত পন্যকে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

এড. মো: কামরুল ইসলাম এমপি বলেন, দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে অনেক অর্জন রয়েছে। পাবলিক পরিবহণে ধূমপান বন্ধ হয়েছে, তামাকের বিজ্ঞাপনের প্রচার বন্ধ হয়েছে। তারপরেও, তামাক কোম্পানিগুলো নানা কৌশলে কর ফাঁকি দিচ্ছে। তিনি তামাক কোম্পানিগুলোর রাজস্ব ফাঁকি রোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি বলেন, কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে সিগারেটের মূল্যস্তর পদ্ধতি বাতিল করে তুলনামূলক উচ্চহারে নির্দিষ্ট পরিমাণ করারোপ করতে হবে। একই সঙ্গে স্বচ্ছতার সঙ্গে কোম্পানিগুলোকে তা পরিশোধে বাধ্য করতে হবে। উচ্চ করহার এবং সুষ্ঠু কর ব্যবস্থাপনা শুধু তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে না।  তামাক থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা নিরসনে স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বিপুল পরিমাণ খরচও কমায় ।

আদিবা আনজুম 
মিতা এমপি বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো বাজেটে তামাকের কর বৃদ্ধিরোধে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের কৌশলের ফাঁদে পরে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য উৎপাদনকারী তামাক কোম্পানিগুলোর পক্ষে কাজ করা যাবে না। সংসদ সদস্যরা জনগনের প্রতিনিধি। তাদের এ তামাক কোম্পানীর এ সকল কার্যক্রম সম্পর্কে সর্তক হতে হবে।

মো: নুরুল ইসলাম তালুকদার এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তামাকের কর বৃদ্ধির বিষয়ে আন্দোলন চলমান রাখতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকের মূল্য বাড়িয়ে এই পন্যের সহজলভ্যতা কমিয়ে আনতে হবে।

এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সংসদ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তথাপি দেশে তামাকের উপর আশানুরূপ হারে কর বৃদ্ধি হচ্ছে না। তামাকের কর বৃদ্ধি হলে চোরাচালান এবং কর ফাঁকি বাড়বে বলে তামাক কোম্পানি কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে। অথচ, কর বৃদ্ধির সাথে চোরাচালান এবং কর ফাঁকির কোন যোগসুত্র নেই। এটি তামাক কোম্পানীগুলো র্কতৃক জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (ঘইজ) সহ নীতি নর্ধিারকদরে বভ্রিান্ত করার অপকৌশল মাত্র।

মূল প্রবন্ধে মিঠুন বৈদ্য বলেন, তামাকজাত পণ্য সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় তামাক পণ্যের ভোক্তার সংখ্যা বাড়ছে, যা স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় বিপজ্জনক। তামাক থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আয় আর ব্যয়ে আর্থিক পার্থক্য প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। যে পরিমাণ কর তামাক থেকে আদায় হয় তার দেড়গুণ তামাকের প্রভাবে অসুস্থ মানুষের চিকিৎসায় ব্যয় হয়। তামাকের ব্যবহার কমাতে এবং কর ফাঁকি রোধে সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বৃদ্ধি এবং তামাকের কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন করা প্রয়োজন।

উক্ত সভায় প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংগঠন, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, বিএনটিটিপি, সিয়াম, ডাস, এইড ফাউন্ডেশন, ডাস বাংলাদেশ, ওয়েপ, শেয়ার ফাউন্ডেশন, শার্প, সিএসডিও, কেএইচআরডিএস, আইডাব্লিউবি, সিডাস, অগ্রদূত, বড়পুকট গণচেতনা ফাউন্ডেশনসহ সারাদেশ থেকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও নাটাবের স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন