English | Bangla
রোজা ও ঈদে নিরাপদ এবং নির্বিঘে যাতায়াতের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরী

রমজান মাসে জনদূর্ভোগ হ্রাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত বাসসমূহ যাত্রী সাধারণের জন্য সড়কে নামানোর ব্যবস্থা করা, যাত্রী চাহিদা অনুসারে ট্রেনের সময়সূচি তৈরী করা, অফিস ছুটির সময় ভাগ করা, ফুটপাত ও সড়কে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা ও পথচারীদের নিরাপদে চলাচলের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ঈদে পর্যাপ্ত সমস্যামুক্ত রেল, বাস ও নৌ যানের মাধ্যমে ঢাকার বাইরে যাওয়া আসার ব্যবস্থা করা। এজন্য সরকার কর্তৃক ঘোষণা প্রদান সাপেক্ষে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সমন্বিতভাবে এগুলি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ০৯ জুলাই ২০১৩ সকাল ১১ টায় পবা মিলনায়তনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে “রমজান ও ঈদে যানজট, দূর্ঘটনা, যানবাহন সঙ্কট মোকাবিলা এবং স্বাভাবিক যাতায়াতের জন্য সুপারিশ” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান বলেন, ঢাকা শহরে ৯৫% চলাচল হয় বাস, রিকশা, হেঁটে ও অন্যান্য গণপরিবহন ব্যবহার করে। আর প্রাইভেট গাড়ি মাত্র ৫0% চলাচলের জন্য ৭০% রাস্তা দখল করে। নামমাত্র মূল্যে পার্কিং করাসহ সড়কে প্রাধান্য দেয়ায় প্রাইভেট গাড়ির যথেচ্ছ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যে কারণে ৯৫ শতাংশ মানুষকে যাতায়াত করতে গিয়ে যানজট ও অন্যান্য দূর্ভোগের শিকার হতে হয়। তিনি সড়কে ও ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং বন্ধ এবং রমজান মাসে সন্ধ্যার পূর্বে ব্যস্ত এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব দেন। ঈদ উপলক্ষ ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থানে যাওয়া আসা মানুষের পরিবহন সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে চাপ কমানোর জন্য পর্যায়ক্রমে ছুটি প্রদানের পরামর্শ দেন।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের উন্নয়ন কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব লিখিত প্রবন্ধে বলেন, রমযান মাসে ঢাকা শহরে যানজট ও জনদূর্ভোগ হ্রাসে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ জরুরী। নগরীতে পর্যাপ্ত পাবলিক বাস চালু রাখা; বিআরটিসিসহ বেসরকারি বাস সার্ভিস কর্তৃক সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা; বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাসমূহে ব্যবহৃত বাসগুলি নিয়মিত সার্ভিসের আওতায় নিয়ে আসা; গাজীপুর-কমলাপুর-নারায়নগঞ্জ কমিউটার ট্রেনে চাহিদানুযায়ী বগি সংযোজন করা; প্রাইভেট কার পার্কিং এর জন্য নির্ধারিত স্থানে “ফি” বৃদ্ধি করা; ফুটপাতে মোটর সাইকেল চলাচল প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা; ও ট্যাক্সি ক্যাব এবং সিএনজি থ্রি হুইলার এর উপর নজরদারি বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেন।

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, সারা পৃথিবীতে জ্বালানী নির্ভরতা ও কার্বণ নির্গমন হ্রাসে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন সেই সঙ্গে হাঁটা ও সাইকেলে যাতায়াতে উৎসাহ প্রদান করা, বাস বে তৈরী করা এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মত অবকাঠামো ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। সড়ককেন্দ্রিকতা থেকে বের হয়ে রেল ও নৌপথকে গুরুত্ব দিয়ে সব মাধ্যমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। ঈদে পর্যাপ্ত সমস্যামুক্ত  রেল, বাস ও নৌ যানের মাধ্যমে ঢাকার বাইরে যাওয়া আসার ব্যবস্থা করার সুপারিশ করেন।

শিক্ষাবিদ কামাল আতাউর রহমান বলেন, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তর ঢাকা শহরে রাখা হয়েছে। তাছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম শহরকে কেন্দ্র করে করা হচ্ছে। আর সেই জন্য বিভিন্ন প্রান্ত হতে লোকজন শহরে এসে ভিড় করে। উন্নয়ন কর্মকান্ড যদি বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় তাহলে জনসংখ্যার এই চাপ কমে আসবে। দীর্ঘমেয়াদে যানজট নিরসনে ঢাকার উপর জনসংখ্যার চাপ কমাতে হবে। এজন্য দেশের অন্যান্য শহরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব দেন।

ঢাকা মর্ডান ক্লাব এর সভাপতি আবুল হাসনাত গাড়ির হর্ণ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর সম্পাদক আব্দুস সোবহান বলেন, রমজান মাসে যানবাহন না মিললেও অন্তত নিশ্চিন্তে হেঁটে চলাচলের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। এজন্য ফুটপাতে হকারদের জিনিসপত্র খাড়াভাবে সাজিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং, ময়লা আবর্জনা এবং কনস্ট্রাকশনের জিনিসপত্র রাখা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। তিনি রাস্তা পারাপারের জন্য ঢাকার সর্বত্র জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা চালুর পরামর্শ দেন। এজন্য জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন এবং সিগন্যালে তার পূর্বে গাড়ি থামানোর জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ঈদে নিরাপদ ও স্বাভাবিক যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য তিনি রেললাইন ও সড়ক সংস্কার এবং সড়কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নিয়োগের পরামর্শ দেন।