English | Bangla
তামাক নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলোর সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর নিজ নিজ পরিকল্পনা থাকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন অনেকাংশে সম্ভব। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট “তামাক নিয়ন্ত্রণে কোন মন্ত্রণালয়ের কি ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে” সে বিষয়ে ২০২১-২২ সালে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার অংশ হিসেবে তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বরাবর তথ্য অধিকার আইন অনুসারে আরটিআই দাখিল করে। মন্ত্রনালয়গুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে প্রস্তুতকৃত গবেষণা পত্রটি আজ ২৭ এপ্রিল ২০২২, সকাল ১১ টায়  ‘বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট’ এবং ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রনে বর্তমান প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক একটি সভায় প্রকাশ করা হয়। ডেভেলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অফ সোসাইটির (ডাস) উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুলের সভাপতিত্বে এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল গবেষণা পত্রটি উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আরিফ হোসেন। 
 
গবেষনা পত্রে উল্লেখ করা হয়, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একক প্রচেষ্টায় কোনভাবেই তামাক নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ, কর বৃদ্ধি, আইন বাস্তবায়ন প্রভৃতি বিষয়গুলোর সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে কৃষি, অর্থ, স্বরাষ্ট্র ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের। তামাক নিয়ন্ত্রণে সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা না থাকার সুযোগ নিয়ে অনেক সময় তামাক কোম্পানীগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেয়। ২০৪০ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় অনুসারে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গিকারকে বাস্তবে পরিনত করতে হলে সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি কোম্পানীর হস্তক্ষেপ বন্ধ ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর পৃথক পৃথকভাবে নিজস্ব পরিকল্পনা থাকা জরুরী। 
 
প্রাপ্ত ৩৩ টি আরটিআই পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ৪৫% (১৫ টি) মন্ত্রণালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। ৫৫% অর্থাৎ ১৮ টি মন্ত্রণালয়ের কোন পরিকল্পনা নেই। ৭টি মন্ত্রনালয়ের পরিকল্পনা ধূমপানমুক্ত স্থান ও সাইন স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, কৌশলপত্র প্রণয়ন ও ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান করার পরিকল্পনা রয়েছে ১ টি মন্ত্রণালয়ের, তামাকের ব্যাবহার শূণ্যের কোটায় নামিয়ে আনার রোডম্যাপ তৈরির বিষয় উল্লেখ করেছে ১ টি মন্ত্রণালয়, ঋঈঞঈ ৫.৩ বা¯তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে ২ টি মন্ত্রণালয়ের, ৩ টি মন্ত্রণালয়ের তামাক চাষীদের বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছে, ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনা বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা উল্লেখ করেছে ২ টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ১ টি মন্ত্রণালয় ধূমপানের কুফল স¤পর্কে সঙ্গীতানুষ্ঠান, ফিলার, ডকুমেন্ট তৈরী করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
 
উক্ত সভায় বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা থাকার পাশাপাশি তামাকের মতো একটি স্বাস্থ্যহানিকর পন্য বিক্রি করতে লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। তামাক কোম্পানীগুলোর নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচারনা যেমন-তামাক কোম্পানি সরকারকে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব দেয়, তামাক কর বাড়লে চোরাচালান বৃদ্ধি পাবে এ মিথগুলো সম্পর্কে সরকারকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করতে হলে কোম্পানীর হস্তক্ষেপের সঠিক চিত্র সরকারের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং তামাক কোম্পানী থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সভায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের রুপরেখা প্রণয়ন, তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়সাধন এবং মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কোড অব কন্ডাক্ট প্রণয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা হয়। 
 
উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, ব্যুরো অফ ইকোনোমিক রিসার্চের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, শিশুদের মুক্ত বায়ূ সেবন সংস্থার প্রচার সম্পাদক মো. সেলিম, শিল্ডের নির্বাহী পরিচালক মো.মাহবুব আলম ফিরোজ, কেএইচআরডিএসের নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা শামীমা সুলতানা, ডাসের প্রোগ্রাম অফিসার রবিউল আলম লিটন, ইন্টিগ্রেটেড  ডেভেলপমেন্ট ফোরামের চেয়ারম্যান ও নির্বাহী পরিচালক এস. এম. শফিউল আযম ও গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির প্রতিনিধি শারিকা তাবাসসুম মিথিলা প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।