English | Bangla
আসন্ন জাতীয় সংসদে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের দাবি শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

আসন্ন জাতীয় সংসদে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের  সংশোধনী পাশের দাবি, পাবলিকে প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের স্থানের বিধান বাতিল, আইনভঙ্গের প্রেক্ষিতে নাগরিককে সরাসরি মামলা করার অধিকার প্রদান এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচীর আড়ালে তামাক কোম্পানির বিজ্ঞাপন বন্ধের সুপারিশ করে আসন্ন জাতীয় সংসদে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশের দাবি করেছে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো। ২০ এপ্রিল ২০১৩ ধানমন্ডিস্থ বিলিয়া অডিটরিয়ামে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, একলাব, এইড, প্রত্যাশা, নাটাব-র উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তরা এই দাবি জানান। জাতীয় যক্ষা নিরোধ সংস্থার সিনিয়র সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. শাহআলম, তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আন্তর্জাতিক সংস্থা দি ইউনিয়নের টেকনিক্যাল এডভাইজার ইসরাত চৌধুরী, পরিবেশবিদ প্রকৌশলী আবদুস সোবহান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নীতিবিশ্লেষক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান। 
 
ড. শাহ আলম বলেন, আমাদের দেশের মূল সমস্যা হলো আইনের বাস্তবায়ন। আইন বাস্তবায়নের জন্য মূল শক্তি হচ্ছে জনগণ। তাই আইন বাস্তবায়নে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তামাক বিরোধী সংগঠন ও সিভিল সোসাইটিকে সম্পৃক্ত করে আইন সংশোধনের পরে দ্রুত বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচীর মাধ্যমে তামাক কোম্পানির প্রচারণা বন্ধ করা উচিত। এছাড়া তামাক কোম্পানি কর্তৃক আইনভঙ্গের প্রেক্ষিতে নাগরিককে সরাসরি মামলা দায়ের করার ক্ষমতা প্রদান করা জরুরি। 
 
অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, তথ্য অধিকার আইনের মতো এ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো একটি চ্যালেঞ্জ। তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য স্কুল কারিকুলাম এবং স্থানীয় পর্যায়ে তামাক বিরোধী প্রচারণা জোরদার করতে হবে।  পরোক্ষ ধূমপান একটি বড় সমস্যা। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে জনগণকে রক্ষায় কাজ করা প্রয়োজন। এছাড়া তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে পার্বত্য এলাকায় বনের যে ক্ষতি হচ্ছে সে বিষয়েও নজর দিতে হবে। 
 
পরিবেশবিদ প্রকৌশলী আবদুস সোবহান, তামাক চাষ পরিবেশে জন্য ক্ষতিকর। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে এখনই আইনের মাধ্যমে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে, তা দেশে খাদ্যের উৎপাদনের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াবে। ইসরাত চৌধুরী  বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে জনগনকে জোরালে ভূমিকা পালন করতে হবে।  ধূমপানমুক্ত স্থানের ভিতরে বা সন্নিকটে ধূমপানের স্থান তৈরির বিধান থাকা উচিত নয়। পাবলিক প্লেস বা পরিবহনে মালিককে ধূমপানমুক্ত সাইন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে কৃষি ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের একত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। 
 
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ১৮৯০ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে মোট ১২ টি আইনের মাধ্যমে ধূমপান ও তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৫ সালের আইনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, প্যাকেটের গায়ে লিখিত সতর্কবাণী নিশ্চিতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং ধূমপানমুক্ত স্থান বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান হ্রাস পায়। কিন্তু পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ বিষয়ে মানুষের প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে গেছে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে সংশোধিত আইনটি বাস্তবায়নের জন্য নতুন নতুন চিন্তা ও পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। 
 
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা-র সেক্রেটারী জেনারেল হেলাল আহমেদ, নিরাপদ ডেভলাপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ইবনুল সাইদ রানা, একলাব-র পরিচালক শামছুল আলম, উবিনীগের সাইদা কুমকুম, সিরাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট এস এম সৈকত, দন্ত চিকিৎসক এ এফ এম সারোয়ার,  মানবিক-র উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন, বাদসা-র সভাপতি এডভোকেট মাহবুব আলম, গ্রীণ ভয়েজের হুমায়ন কবির সুমন, পবা-র সদস্য এ কে এম সেরাজুল ইসলাম  প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পরিবেশবিদ, শিক্ষাবিদ এবং সমাজকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।