English | Bangla
যাতায়াত ব্যবস্থায় পথচারীদের অগ্রাধিকার প্রদানের পরামর্শ

সারাদেশে সড়ক দূর্ঘটনায় যারা মারা যায় তার প্রায় অর্ধেক পথচারী। ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে একজন পথচারী সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে। পথচারীদের উপেক্ষা করে নীতি প্রণয়ন, পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণের করাই এই দূঘর্টনার  অন্যতম কারণ। দূষণ ও জ্বালানি নির্ভরতা হ্রাস এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য মানুষকে হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এজন্য যাতায়াত ব্যবস্থায় পথচারীদের অগ্রাধিকার প্রদান জরুরী। ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে বি.আই.পি. মিলনায়তনে নগর যাতায়াত ব্যবস্থায় হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞগণ এই পরামর্শ প্রদান করেন।

বি.আই.পি.  সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান এর সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সেমিনারে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে বি.আই.পি. সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ খন্দকার এম আনসার হোসেন এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান। সেমিনারে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সমাজকর্মী সিরাজুল ইসলাম, সেন্টার ফর ইন্জুরি প্রিভেন্সন এন্ড রিসার্চ এর জাতীয় সমন্বয়কারী ড.কামরান উল বাসেত, পিস এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, বিসিএইসআরডি এর নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুর রহমান। সভা সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন।

খন্দকার এম আনসার হোসেন তার প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন, যে সকল প্রয়েজনে যাতায়াত করে থাকি তা যদি বাসার নিকটে পাওয়া যায় তাহলে যাতায়াতের দূরত্ব কমে আসবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। একটি শহরের পরিকল্পনা ঠিকভাবে করা গেলে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

মারুফ রহমান তার প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন, মানুষের সুস্থ্য থাকার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হেঁটে যাতায়াত করলে মানুষের মধ্যে মুটিয়ে যাবার প্রবণতা ৫০ভাগ, উচ্চরক্তচাপ এর প্রবণতা ৩০ভাগ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস এর প্রবণতা ৫০ভাগ কমে আসবে। ঢাকায় ৩৭ ভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে। ঢাকায় ৭৬% যাতায়াত হয় ৫ কিলোমিটার এর মধ্যে, এরও অর্ধেক ২ কিলোমিটারের মধ্যে। যে কারণে পথচারীবান্ধব পরিবেশ থাকলে মানুষ খুব সহজে হেঁটেই যাতায়াত চাহিদা পূরন করতে পারে।

এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, পথচারীবান্ধব প্রশস্ত ও সমান্তরাল ফুটপাথ এর অভাব, ফুটপাথে যানবাহনের অবৈধ পার্কিং ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা, পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং-এর অভাবও পথচারীদের দূর্ঘটনায় নিহত বা আহত হবার জন্য কারণ। এজন্য যথাযথ নীতি, আইন প্রণয়ন ও পালন, অবকাঠামো তৈরি এবং সচেতনতার মাধ্যমে হাঁটার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর দেওয়ান নকিব আহসান বলেন, বর্তমানে জনস্বাস্থ্যর জন্য বিষয়টি গুরুত্বপুর্ণ। আমাদের কাজের সফলতা পেতে এই ধরনের কার্যক্রমের সাথে সিভিল সোসাইটির সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

এলজিইডির নিবার্হী প্রকৌশলী আবু মন্জুর মোঃ সাদিক বলেন, জেলা ও উপজেলায় হাঁটার পরিবেশ তৈরীতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচারক ফারজানা সমিরুদ্দিন বলেন, ঢাকা শহরে কাজ করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। এর থেকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

আবু নাসের খান বলেন, মানুষ হাঁটতে পারত বলেই তার উন্নয়ন হয়েছে এবং হাঁটার ফলে মানুষের বিকাশ সাধিত হয়েছে। বর্তমানে গাড়ী ব্যবহার হয় সামাজিক আভিজাত্য বজায় রাখার জন্য। আমাদের ছোটবেলা থেকেই পড়ানো হয় “লেখাপড়া করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে”, যা আমাদের এক ধরনের গাড়িকেন্দ্রিক বা বিলাসী জীবন যাপনের মানসিকতা তৈরি করছে। আমাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ মানুষের মত মানুষ হওয়া। তাহলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায়।

পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর ড. গোলাম রহমান বলেন, পথচারীর মৃত্যু কমাতে সিভিল সোসাইটির সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। পরিকল্পনা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য না করে দীর্ঘমেয়াদে করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করেন। এতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, রাজউক, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।