English | Bangla
“যানজট হ্রাসে পাবলিক বাসের গুরুত্ব ও মানোন্নয়নে করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

ঢাকার যানজট হ্রাসে পাবলিক বাসের সুবিধা বৃদ্ধি এবং প্রাইভেট গাড়ী নিয়ন্ত্রণে সঠিক পরিকল্পনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। ০২ জুন ২০১০ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বুয়েটের ইউআরপি বিভাগ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘যানজট হ্রাসে পাবলিক বাসের গুরুত্ব ও মানোন্নয়নে করণীয়’’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার যানজট সমস্যা নিরসনের জন্য চলমান অবাস্তব ও সমন্বয়হীন কর্মকান্ড কোন সমাধান দিতে পারেনি। বরং এই সঙ্কট ক্রমশ বাড়ছে। যানজটে নষ্ট হচ্ছে মানুষের মূল্যবান সময়, ব্যহত হচ্ছে উৎপাদন, বাড়ছে দূষণ, দূর্ঘটনা, তাপমাত্রা, জ্বালানী নির্ভরতা এবং যাতায়াত খরচ। পাবলিক পরিবহনের সীমাবদ্ধতা, হাঁটার প্রতিবন্ধকতা, রিকশায় চলাচলের এবং প্রাইভেট গাড়ীর অব্যাহত বৃদ্ধি ঢাকার যানজটকে বৃদ্ধি করছে। প্রাইভেট গাড়ীকেন্দ্রিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জনগনের অর্থে ফ্লাইওভার, পার্কিংসহ বিভিন্ন সুবিধার মাধ্যমে প্রাইভেট গাড়ীকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যে কারণে ঢাকায় পঁচানব্বই ভাগ মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে অবহেলিত যারা পাবলিক বাসে, রিকশায়, হেঁটে, সিএনজি থ্রি-হুইলার, ট্যাক্সি, হিউম্যান হলারসহ অন্যান্য গণ পরিবহন ব্যবহার করছে।             
 
বক্তারা আরো বলেন, প্রাইভেট গাড়ি চব্বিশ ঘন্টায় পচানব্বই ভাগ সময় পার্কিং করা থাকে। একটি প্রাইভেট গাড়ি দিনে দুই থেকে তিনটি ট্রিপ দিয়ে দুই/তিন জন যাত্রী বহন করে থাকে। ১টি বাস এক ট্রিপে প্রায় একশ যাত্রী পরিবহন করে। সেক্ষেত্রে একটি বাসে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশো যাত্রী চলাচল করে থাকে। প্রাইভেট গাড়ির চেয়ে বাসের দক্ষতা প্রায় দেড়শ গুন বেশি। প্রাইভেট গাড়ির বৃদ্ধিতে শুধুমাত্র চলাচলেই বেশি জায়গার প্রয়োজন পড়ে তাই নয়, পার্কিং এর জন্য শহরের মূল্যবান জায়গার অপব্যবহার হচ্ছে। পাকিং এর কারণে সড়কের জায়গা সংকোচনের মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। শুধুমাত্র যানজটই নয়, দূষণ, জ্বালানীর ব্যবহার ও পরিবহন খরচ কমানোর জন্যও প্রাইভেট গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পাবলিক বাসের মানোন্নয়ন ঘটানো সময়ের দাবী।
 
বক্তারা বলেন, বিদ্যমান বাস সার্ভিসে টাকা দিয়ে মানসম্মত সার্ভিস পাওয়া যাচ্ছে না। সঠিকভাবে বাস রুট ডিজাইন ও বরাদ্দ না দেয়া, পর্যাপ্ত বাস না থাকা, বাসে ওঠা-নামার জন্য সঠিক স্থান নির্ণয় না করা, যাত্রী ছাউনি ও কাউন্টার না থাকা, বাস চালকদের বেপয়োয়া চালনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, বাস স্টাফদের অসৌজন্যমূলক ব্যবহার, বাস বে তৈরি না করা, বাস স্টপেজে আসা যাওয়ার জন্য হেঁটে, সাইকেলে ও রিকশায় চলাচলের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি না করা, বাস রুটগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, আন্তনগর বাস, রেল ও নৌ পরিবহনের সঙ্গে সিটি বাসের সমন্বয়ের ঘাটতি, বাস ডিপোর অভাব ও ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্যসহ সার্বিক সেবামান নিশ্চিত করার জন্য সঠিক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ও তদারকির অভাবেই পাবলিক বাসের সর্বোচ্চ সুবিধা কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। 
 
বক্তারা, পাবলিক বাস সার্ভিসের মানোন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা; দক্ষভাবে পাবলিক বাস পরিচালনার জন্য অভিভাবক সংস্থা রাখা ও কর্মরত সকল সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করা; বাস যাত্রীদের সেবা নিশ্চিত হচ্ছে কি না  সে বিষয়ে তদারকি ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা; সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা প্রতিরোধ করা; বাস স্টপেজের ডিজাইন করতে হবে এমনভাবে যাতে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধিসহ সকলের ওঠানামার সুবিধা বজায় থাকে; সঠিকভাবে বাস রুট ডিজাইন ও বরাদ্দ দেয়া; বাস স্টপেজের সঙ্গে বাসা ও অফিসের মধ্যবর্তী যাতায়াতের জন্য হেঁটে, সাইকেলে ও রিকশায় চলাচলের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা; সড়কে বাসের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ করা; সিগন্যালে বাসকে প্রাইভেট কারের পূর্বে ছেড়ে দেওয়া; সরকারী উদ্যোগে বাস ডিপো নির্মাণ ও সেখানে বাস মেরামতের যাবতীয় সুবিধা রাখা; চাহিদানুযায়ী টেকসই বড় বড় বাস নামানোর ব্যবস্থা করা; রেলওয়ে স্টেশন, নৌ-টার্মিনাল ও দূরপাল্লার বাস টার্মিনালের সঙ্গে সিটি বাসের সমন্বয় করার সুপারিশ করেন।
 
গোলটেবিল বৈঠকে পরিবেশ বাঁচাও অন্দোলনের চেয়ারম্যান অবু নাসের খানের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মারুফ রহমান। এছাড়া আলোচনা করেন, বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান ড. সারোয়ার জাহান এবং অধ্যাপক ড. মাহবুব-ইন-নবী, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান শাহেদা রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ড. তাজমেরী এস ইসলাম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রমূখ।