English | Bangla
“পার্ক ও খেলার মাঠ সংরক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগী করার গুরুত্ব” শীর্ষক মতবিনিময় সভা
২ লক্ষ ৩০ হাজার ৭ শত ৬৯ জন মানুষের জন্য একটি পার্ক বা খেলার মাঠ রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তাছাড়া বিদ্যমান অধিকাংশ পার্ক ও মাঠসমূহ ব্যবহারের উপযোগী না থাকায় মানুষ এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। স্বাস্থ্য, সামাজিকতা, পরিবেশ, অর্থনীতি বিবেচনায় পার্ক ও খেলার মাঠ রক্ষায় সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ২৯ মার্চ ২০১৪ তারিখ সকাল ১১ টায় ডাব্লিউবিবি সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স (বি.আই.পি) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে নগরে সুস্থ ও প্রাণবন্ত পরিবেশ গড়ে তুলতে “পার্ক ও খেলার মাঠ সংরক্ষণ ও ব্যবহার উপযোগী করার গুরুত্ব” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।  
 
সভায় অধ্যাপক ড. মোঃ আকতার মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্র্স (বি.আই.পি) এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, শরিফ জামিল নির্বাহী সদস্য বাপা, গাউস পিয়ারী পরিচালক ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, মো. হাসান আলি সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার টিআইবি, মিলু চৌধুরী পরিচালক সাওল হার্ট সেন্টার, সৈয়দ আজীজুল হক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী পিডাব্লিউডি, মাহাবুবুর হক নির্বাহী পরিচারক বিসিএইসআরডি, একেএম সিরাজুল ইসলাম সদস্য পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন। সভা সঞ্চালনা করেন  সৈয়দ সাইফুল আলম মিডিয়া এডভোকেসি অফিসার ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।
 
সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান। তিনি বলেন বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের কারণে ৬১ শতাংশ মানুষ মারা যায়। যার মধ্যে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যান্সার অন্যতম। পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে এ সমস্ত রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে গ্রামের তুলনায় শহরে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক এর কারণে মৃত্যুহার দ্বিগুন এবং ক্যান্সার তিনগুন। পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে এ সব রোগের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা যায়। শহর এলাকায় পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, পার্ক না থাকায় নগরবাসী হাঁটা-চলা, খেলাধুলা এবং শরীর চর্চার করার জন্য প্রয়োজনীয় স্থান পায় না। 
 
অধ্যাপক ড. মোঃ আকতার মাহমুদ বলেন, শহরে পার্ক ও খেলার মাঠ না থাকায় খেলাধূলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ কমে যাওয়ায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে সময় একজন কিশোরের খেলার মাঠে থাকার কথা সে হয়তো কম্পিউটারের সামনে থেকে আত্মকেন্দ্রীক অথবা পাড়ার দোকানের সামনে আড্ডা দিয়ে ধীরে ধীরে অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের খেলাধূলা ও নির্মল বিনোদনের সুযোগ থাকলে এই পরিস্থিতি তৈরির প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। 
 
গাউস পিয়ারী বলেন, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ নগরে বাস করে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জনই নগরের বাসিন্দা হবে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ২৮.৫ শতাংশ মানুষ নগরে বাস করে থাকে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে নগরে মানুষের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। দূষণ, মানুষের মুটিয়ে যাওয়াসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়া, সামাজিকীকরণের সুযোগ কমে যাচ্ছে। 
 
শরিফ জামিল বলেন, ঢাকার অপর্যাপ্ত পার্ক ও খেলার মাঠ না থাকা অন্যতম নাগরিক সমস্যা। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকায় বর্তমানে ৫৪ টি পার্ক এবং ১১ টি খেলার মাঠ রয়েছে বলা হলেও এটি সঠিক পরিসংখ্যান  নয়। নগরীতে কতটি খেলার মাঠ ও পার্ক হয়েছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান দায়িত্বশীল কোন প্রতিষ্ঠানের কাছেই নেই। মাঠ ও পার্কগুলোর মালিকানা ও রক্ষণাবেক্ষণে একাধিক দায়িত্বপাপ্ত প্রতিষ্ঠান থাকায় সমন্বয়হীনতার জন্যে মাঠ ও পার্কগুলো যথাযথ ব্যবহারের মানুষ  বঞ্চিত হচ্ছে।
 
একেএম সিরাজুল ইসলাম যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত বাতাসের বিপরীতে ঢাকার মাঠ ও পার্কগুলো নগরীর ফুসফুস হিসেবে কাজ করে। যে শহরে উন্মুক্ত স্থান বেশি সে শহরে মৃত্যুহার কম। পার্কের সবুজ গাছপালা নগরীর বাতাস পরিশুদ্ধ করে ও উত্তপ্ত পরিবেশকে ঠান্ডা করে। গাছে গাছে আশ্রয় নিতে পারে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি।