English | Bangla
হাঁটার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা জরুরী
ঢাকার ৯৩ শতাংশ যাতায়াত গণপরিবহণ, হাঁটা এবং সাইকেলের মাধ্যমে হওয়া স্বত্তেবও আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে উঠছে ব্যক্তিগত গাড়িকে কেন্দ্র করে। আমাদের দেশের প্রকল্পসমূহ গৃহীত হচ্ছে ব্যক্তিগত গাড়িকে উৎসাহিত করে। প্রতিদিন গড়ে ৬৭টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধিত হচ্ছে। বর্তমানে কেবল মাত্র ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা তিন লক্ষেরও অধিক। রাস্তায় এবং ফুটপাতে যত্রতত্র ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং, হাঁটার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ও যানজট সৃষ্টি করে। যানজটের ফলে দেশে বছরে ২৩,০০০ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য দূষণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। যে কারণে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৫,০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তাই হাঁটার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ এবং যানজট হ্রাসে ফুটপাতে এবং ব্যস্ত সড়কে পার্কিং বন্ধ করা জরুরী। আজ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “পার্কিংয়ের কারণে সৃষ্ট সমস্যা : সাত সমজিদ রোডের বাস্তবতা” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা উক্ত মতামত ব্যক্ত করেন। 
 
নাঈমা আকতার, সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, সভায় মূল প্রবন্ধে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পক্ষ থেকে ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোডের অবৈধ পার্কিং এর উপর সংঘটিত একটি পর্যবেক্ষণের ফলাফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাত্র ১.৫ কিলোমিটার রাস্তার মাঝে অন্তত ১৬ টি পয়েন্ট আছে যেখানে অবৈধ পার্কিং লক্ষ্য করা যায়। বিদ্যমান আইন ও নীতিমালায় অবৈধ পার্কিং এর শাস্তির উল্লেখ থাকলেও তার কোন প্রয়োগ দেখা যায় না। ব্যক্তিগত গাড়ি পাকিং এর ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করার চেষ্টার পরিবর্তে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে যানজট, সময় ও জ্বালানী অপচয়, দূষন ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করা প্রয়াজন।
 
মারুফ হোসেন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এলসি, এনসিডি, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট আলোচনা সভা সঞ্চালনাকালে বলেন, নীতি, পরিকল্পনা ও প্রকল্পসমূহ কারকেন্দ্রিক হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা সঙ্কটাপন্ন। ঢাকা স্ট্রকচার প্ল্যান ২০১৬-৩৫ খসড়ায় ১০ টি নতুন পার্কিং ভবন এবং ৩ টি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাব রযেছে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ এ গাড়ি পার্কিং  বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা এই শহরে প্রাইভেট বৃদ্ধির জন্য একটি অপকৌশল হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু সমন্বিত বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা, ২০১৩ তে পথচারী প্রাধান্যের কথা উল্লেখ রয়েছে। এ সমন্বয়হীনতা চলমান থাকলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। যা পরিবহন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। 
 
নাজনীন কবীর, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, বলেন, যত্রতত্র পার্কিং এবং গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট থেকে রুল জারি করা হয়েছে। আমরা আশা করি এর মাধ্যমে শব্দদূষণ এবং অবৈধ পার্কিং এর কারণে সৃষ্ট যানজট এর কারণে যে জনদুর্ভোগ তা দূর হবে। রাজিয়া সামাদ, নিবার্হী পরিচালক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্যের কারণে পথচারীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে বড় শহরগুলোতে এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ভবিষ্যতে ছোট শহরগুলোতেও এ সমস্যা ছড়িয়ে পড়বে। এখনই যদি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তবে ঢাকা শহরকে বসবাসযোগ্য শহরে পরিণত করা সম্ভব হবে না।
 
তালুকদার রিফাত পাশা , প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  যাতায়াতের সুবিধার্থে কোন ব্যবস্থা ঢাকা শহরে নেই। যাতায়াত করতে যেয়ে তাদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ফুটপাতে অবৈধ পার্কিং এবং ভাঙ্গাচোরা থাকার কারণে ফুটপাত ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য গনপরিবহণ সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরী এবং সেই গণপরিবহন অবশ্যই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী হতে হবে। 
 
আলোচনা সভার সভাপতি, আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলেন, ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করার কথা বলা হয় কিন্তু যে পরিকল্পনাসমূহ গ্রহণ করা হচ্ছে তা ঢাকা শহরকে আরো বেশি বসবাস অযোগ্য করে তুলবে। যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ একমাত্র সমাধান। এ লক্ষ্যে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের এ আন্দোলন তরুণ সমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করে আন্দোলনকে আরা সুদূরপ্রসারী করতে হবে। 
 
উক্ত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মো আলী হাজারী, নির্বাহী পরিচালক, ইউনাইটেড পিপলস ট্রাস্ট; সেলিম খান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন; আতিক মোর্শেদ, প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো আতিকুর রহমান এবং সহকারি এডভোকেসি কর্মকর্তা তানজিলা চেীধুরী।