English | Bangla
ঢাকা-নারায়নগঞ্জ যাত্রী সেবা বৃদ্ধিতে দ্রুত ডাবল রেললাইন নির্মাণের দাবি
ঢাকা-নারায়নগঞ্জ রেল রুটটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রতিদিন চাকুরিজীবি, ব্যবসায়ী ও ছাত্রসহ হাজার হাজার মানুষ এ রুটে যাতায়াত করেন। ভাঙ্গা সিট, কোচের স্বল্পতা, পর্যাপ্ত আলোর অভাব, ফ্যান ও পয়ঃব্যবস্থাপনা না থাকা, মহিলা বগিতে কম সংখ্যক আসন, পুরাতন লোকোমোটিভ ও মেয়া উত্তীর্ণ কোচ এবং নিয়মিত লাইন মেরামত না করায় প্রতিদিন যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা- নারায়নগঞ্জ যাত্রী সেবা বৃদ্ধি এবং ডাবললাইন নির্মান করা হলে অধিকসংখ্যক কমিউটার ট্রেন চালুর মাধ্যমে ঢাকার নিকটবর্তী জেলাগুলোর ( ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, নরসিংদি, ভৈরব, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, প্রভৃতি) সাথে সংযোগ স্থাপনসহ যাত্রী দুর্ভোগ লাঘব করা সম্ভব হবে। এতে করে রেল যেমন স্বনির্ভর হবে তেমনি ঢাকা শহরের উপর জনসংখ্যার চাপ কমবে এবং জেলা পর্যায়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আজ ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, রোজ রবিবার সকাল ১১.০০ টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডাব্লিউবিবি) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত “ঢাকা-নারায়নগঞ্জ রেল ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে: যাত্রী সেবা বৃদ্ধিতে আমাদের সুপারিশ” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বক্তরা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
মতবিনিময় সভার শুরুতে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান তার উপস্থাপনায় বলেন, স্বল্প সময় ও খরচে নিরাপদ ভ্রমণের কারণে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত জনপ্রিয়। ১৮৮৪ সালের ৪ জানুয়ারি এই পথে রেল যোগযোগ শুরু হয়। সেই বছর রেলওয়ে ১১৩৫,৮৬৪ টাকা আয় করতে সক্ষম হলেও বর্তমানে অব্যবস্থাপনার রেল কাঙ্খিত আয় করতে পারছে না।  যাত্রী সেবা বৃদ্দির লক্ষ্যে ৬৩৫ কোটি টাকা দিয়ে ডেমু ট্রেন কেনা হলেও তা যাত্রী সেবায় কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। অথচ এই টাকা দিয়ে ২০ টি লোকোমোটিভ এবং ১০০ টি শীততাপ নিয়ন্ত্রতি কোচ কেনা সম্ভব হতো। অর্থ্যাৎ ২০ টি ট্রেন পরিচালনা করা যেত। বর্তমানে একটি সাধারন ট্রেন মাত্র ২৫ লিটার ডিজেল খরচ করে ১৫০০ যাত্রী পরিবহন করছে। অথচ সমপরিমান যাত্রী পরিবহন করতে সড়কে প্রয়োজন হবে ৩৮ টি বাস এবং ২২৮ লিটার ডিজেল। শুধু তাই নয় সড়কের চাইতে রেলে যাত্রী প্রতি জ্বালানী খরচও কম। রেলে যাত্রী প্রতি জ্বালানী খরচ ০.০২ লিটার পক্ষান্তরে সড়কে ০.১৫ লিটার। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, রেলের উন্নয়নের অন্যতম অন্তরায় লোকবল সংকট। এর নেপথ্য কারণ হলো মামলা সংক্রান্ত জটিলতা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহেলা ও স্বদিচ্ছার অভাব, শ্রমিক সংগঠনগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্টতা, সড়ক যোগাযোগের সাথে সংশ্লিষ্টদের কর্মতৎপরতা। তিনি ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ আরো বেশি ট্রেন চালু করা এবং অবৈধ লেভেক্রসিংগুলোকে ব্যবস্থায় নিয়ে আসার আহ্বান জানান। 
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টে প্রোগ্রাম ম্যানেজার, এলসি, এনসিডি মারুফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পরপরই সরকার রেলের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহন করলেও পরবর্তীতে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। ঢাকা- যাত্রাবাড়ী ১১.৭ কি.মি. ফ্লাইওভার নির্মানে ২,১৮৭ কোটি টাকা ব্যয় করলেও ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ ১৬ কি.মি রেলপথ ডাবল লাইন নির্মানের জন্য ৩৭৮ কোটি টাকা খরচ করতে কালক্ষেপন করা হচ্ছে। তিনি ট্রেনের সময়সূচি ঠিক রাখা,  মানসম্মত লোকোমোটিভ ও কোচের ব্যবস্থা এবং সময়মত  রেললাইন মেরামতের সুপারিশ করেন। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর কো অর্ডিনেটর আতিক মোরশেদ বলেন, পরিবেশ বান্ধব, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী পরিবহন মাধ্যম হিসেবে রেল যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা সবাই জানি। তথাপি যোগযোগ ব্যবস্থায় এই মাধ্যটিকে কেন অবহেলা করা হচ্ছে না বোধগম্য নয়। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের ভাড়া ১০/১৫ টাকা অথচ বাসে ৫৪ থেকে ৫০ টাকা। যা নাকি ট্রেনের ভাড়ার তিনগুন। সম্ভাবনাময় রেল কারখানাগুলোকে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। তিনি টেন্ডারের সময়সীমা শেষে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ রেললাইন পরিচালনা করার আহ্বান জানান। 
 
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সহ সম্পাদক দিনা খাদিজা বলেন, আমরা শুধু একের পর এক ফ্লাইওভার নির্মান করছি। অথচ যে মাধ্যম দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করছে তার উন্নয়ন করছি না। 
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টে ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, নাজনীন কবীর বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে মহিলাদের জন্য আলাদা একটি কোচের ব্যবস্থা করেছেন যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকার কারনে মহিলা যাত্রীরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না।
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টে এর তালুকদার রিফাত পাশা বলেন, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন দেশের সবচেয়ে বড় স্টেশন। অথচ এখানে প্রতিবন্ধীদের স্টেশনে এবং ট্রেনে উঠা নামার কোন ব্যবস্থা নেই। 
 
এছাড়া  আঃ ছোবহান জুয়েল এবং আল্লামা দিদার বলেন, ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ অধিকাংশ ট্রেনের জানালা ভাঙ্গা, ভিতরে ফ্যান এবং বাতির ব্যবস্থা না থাকার কারনে যাত্রীদের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।