English | Bangla
ধূর্ত তামাক কোম্পানির ষড়যন্ত্র রুখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে কঠোর হওয়ার আহবান তামাক বিরোধী সংগঠনসমূহের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

বাংলাদেশ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ হওয়া সত্ত্বেও বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদানে পিছিয়ে রয়েছে। যা আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। মূলত বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো দেশের তরুণ সমাজকে নেশায় ধাবিত করতে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের বিষয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের দৃঢ় অবস্থানকে তামাক বিরোধী সংগঠনসমূহ সমর্থন জানায়।
তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রচলনে তামাক কোম্পানির ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে আহবান জানিয়ে ০৬ জানুয়ারি, ২০১৬ জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা এই সমর্থন ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব)  এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট রাজনীতিক, নাটাব-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব মোজাফফর হোসেন পল্টু।
এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন’র সম্পাদক হেলাল আহমেদ, মানবিকের উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’র নির্বাহী পরিচালক ইবনুল সাইদ রানা প্রমুখ। এতে সংগঠনসমূহের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাটাব’র সম্মানিক নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক কূটনীতিক মুহাম্মদ কামালউদ্দিন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মুখপত্র সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন’র সঞ্চালনায় সম্মেলনে এইড’র নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল, নাটাব’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খায়েরউদ্দিন আহমেদ মুকুল, বাদশা’র সভাপতি এডভোকেট মাহবুব আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার যেমন, তেমনি বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকারও। প্রধানমন্ত্রী মানুষকে তামাকজনিত মৃত্যু থেকে রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দায়িত্ব নিয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করেছেন। সরকারের চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে প্রতিহত করতে তামাক কোম্পানিগুলো ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। রাষ্ট্রের আইন অমান্য করার দুঃসাহস যাতে তামাক কোম্পানিগুলো না পায়Ñ সেজন্য আমরা সরকারের, স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের পাশে আছি।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মেডিকেলে অধূমপায়ী ভর্তির ঘোষণা দিয়েছে, যা যুগান্তকারী। মন্ত্রীর এ ইতিবাচক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। পাশাপাশি মন্ত্রীকে ধূর্ত তামাক কোম্পানির কার্যক্রম প্রতিহত করতে আরও কঠোর হওয়ার আহবান জানাই।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের চাইতে ৩ বছর পরে এফসিটিসি র‌্যাটিফাই এবং ৬ বছর পর ২০১১ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করলেও তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে পাশ্ববর্তী দেশ নেপাল। বর্তমানে সব তামাকের মোড়কে ৯০ভাগ স্থান জুড়ে স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করছে নেপাল। অথচ বাংলাদেশ আইন প্রণয়নের ১১ বছর পর যখন আইন অনুযায়ী ১৯ মার্চ থেকে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করতে যাচ্ছে, তখন ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। মৃত্যুর ফেরিওয়ালা হিসাবে পরিচিত ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলোর প্রতারণা প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক ও তামাক কোম্পানির কার্যক্রম প্রতিহত করতে আইন করেছে সরকার। এ আইন জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য, ধূর্ত তামাক কোম্পানির প্রতারণার সুযোগ দেযার জন্য নয়। তাই তামাক কোম্পানির প্রতারণা কার্যক্রমকে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে।
আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, যেসব তামাক কোম্পানি বাংলাদেশে তামাকের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান প্রতিহত করতে ষড়যন্ত্র করছে, সেসব কোম্পানি অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, নেপালসহ পৃথিবীর প্রায় ৮০টির অধিক দেশে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদান করেছে।
লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ কামালউদ্দিন বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পন্থা ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী।  বড় সতর্কবাণী প্রদান করা করায় অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, নরওয়ে, উরুগুয়ে, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে তামাকের ব্যবহার ক্রমশ কমছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিনযাবত তামাক বিরোধী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সরকার আইনের আলোকে যখন তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদানের উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন মৃত্যুর ফেরিওয়ালা তামাক কোম্পানিগুলো আইন বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।