English | Bangla
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও বর্তমান প্রেক্ষিত শীর্ষক গবেষণার তথ্য প্রকাশ তামাকের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণীর প্রত্যাশায় বাংলাদেশ

বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর প্রত্যাশায় সমগ্র বাংলাদেশ। সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারী সবাই তামাকের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণীর প্রচলনকে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, যা আগামী ১৯ মার্চ ২০১৬ থেকে এ সচিত্র সতর্কবাণীর প্রচলন করা হচ্ছে।
১১ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি সভাকক্ষে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর উদ্যোগে পরিচালিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন ও বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপরোক্ত তথ্য তুলে ধরা হয়।
ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. জসিম উদ্দিন প্রমুখ। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর মূখপত্র সমন্বর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন এর সঞ্চালনায় সভায় গবেষণার উপর ভিত্তি করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিআইইউ-এর সহকারী অধ্যাপক ও টিসিআরসি’র সদস্য সচিব বজলুর রহমান।
প্রবন্ধে বজলুর রহমান বলেন, ১০০% টাস্কফোর্স সদস্য মনে করেন, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করা হলে তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তামাকের ব্যবহার কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এর মধ্যে ৪১% মনে করেন, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনবে বেগবান করবে। ৩০.৮% মনে করেন, তামাক সেবনের হার কমবে এবং ২৮.২% মনে করেন, তামাকের মৃত্যুঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও ২০১৫ সালে বিধিমালা পাস হওয়ার পর মানুষের মধ্যে আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ এর গুরুত্ব অধ্যধিক। কিন্তু এ সম্পর্কে টাস্কফোর্স সদস্য ও মানুষের মধ্যে জানার পরিধি খুবই কম। তাই ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলো আইন বাস্তবায়নে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তামাক কোম্পানির সব অপকৌশল কঠোরভাবে বন্ধ করা দরকার।
মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সামনে আসছেÑএসব নির্বাচনে বিড়ি, সিগারেটসহ তামাকের ব্যবহার বন্ধ করা দরকার। তরুণদের তামাকের ব্যবহারের নিরুৎসাহিত করতে ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। বিশেষ করে, নির্বাচনে অধূমপায়ীদের মনোনয়ন ও রাজনৈতিক দলে নেতৃত্ব দেয়ায় অধূমপায়ীদের প্রাধান্য দিতে হবে।
পরিবেশবিদ আবু নাসের খান গবেষণার প্রশংসা করে বলেন, একসময় বাসে কেউ সিগারেট ধরালে কিছু বলা যেত না। কিন্তু তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে অধূমপায়ীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, মানুষের মধ্যে মৌলিক পরিবর্তন হয়েছেÑতা খুবই ইতিবাচক। এখন খুব কম ধূমপায়ীই গণপরিবহনে বা পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে। তামাক কোম্পানিগুলো সংগঠিত ‘কালপ্রিট’Ñতারা এমন একটি ব্যবস্থা সৃষ্টি করেছে, যা আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তবু যে গতিতে তামাক বিরোধী আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছেÑতা প্রশংসনীয়। তিনি তামাক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের উপরও গুরুত্বারোপ করেন।
বিশিষ্ট রাজনীতিক মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলোর প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সদিচ্ছা, সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সুদৃঢ় অবস্থান, তামাক বিরোধী সংগঠন ও গণমাধ্যম কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশে অগ্রগতি প্রশংসনীয়। এই অগ্রগতি ধরে রাখতে, কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণকে উৎসাহিত করতে সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীকে সমর্থন দেয়া দরকার। তামাক কোম্পানির ষড়যন্ত্র প্রতিহত ও ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ তুলে ধরতে গণমাধ্যম কর্মীদের সক্রিয় ভূমিকার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনকে বেগবান করা প্রয়োজন।
মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এন্ড হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও ক্যান্সার এপিডেমিলোজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মফিজুল ইসলাম বুলবুল, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, নাটাব’র কর্মসূচি ব্যবস্থাপক এ কে এম খলিল উল্লাহ, একলাব এর নির্বাহী পরিচালক মো. তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।
টিসিআরসির নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্ব দেন টিসিআরসির সহকারী গবেষক ফারহানা জামান লিজা ও মো. মহিউদ্দিন রাসেল এবং তথ্য বিশ্লেষণে সহযোগিতা করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. ফরহাদ হোসেন। দেশের ১০টি জেলায় এ গবেষণা পরিচালিত হয়।