English | Bangla
তামাক নিয়ন্ত্রণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়ন জরুরী
২০০৩ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে গৃহিত বিশ্বব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক চুক্তি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার Framework Convention on Tobacco Control (FCTC)। বাংলাদেশ এ চুক্তির প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। মোট ১৬৮ টি দেশ এই চুক্তি স্বাক্ষর এবং ১৮০টি দেশ অনুস্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ এই চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ। এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে “তামাক নিয়ন্ত্রণ স¤পর্কিত জনস্বাস্থ্য নীতি প্রনয়ণ ও বাস্তবায়নে রাস্ট্রসমূহ জাতীয় আইন অনুযায়ী তামাক কো¤পানির বাণিজ্যিক এবং অন্য কায়েমী স্বার্থ থেকে এই নীতিমালা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবেন”। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম তামাক কোম্পানীর প্রভাবমুক্ত রাখতে বাংলাদেশে এর বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। গত ২৩ মার্চ , ২০১৬ সকাল ১১টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র আয়োজনে সংগঠনের নিজস্ব কনফারেন্স রুম, রায়েরবাজার, ঢাকায় “তামাক নিয়ন্ত্রণে এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক আইজিপি ড: এনামুল হক এর সভাপত্বিতে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্যা ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শ সৈয়দ মাহবুবুল আলম, নারীপক্ষের সহ-সমন্বয়কারী সামিয়া আফরীন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রশাসনিক পরিচালক গাউস পিয়ারী, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ছট্কু আহমেদ, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল হেলাল আহমেদ, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সাগুফতা সুলতানা প্রমূখ। অনুষ্ঠানে সঞ্চলনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অন্যনা রহমান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা ফাহমিদা ইসলাম।
 
মূল প্রবন্ধে ফাহমিদা ইসলাম বলেন, এফসিটিসি এর মূল লক্ষ্য তামাকের কারণে উদ্ভুত মারাতœক স্বাস্থ্যগত, সামাজিক, পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় কমানো। সেইসাথে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের তামাকের ব্যবহার সীমিত ও নীতি প্রনয়ণের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা। তামাক কোম্পানীগুলো মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে নীতিসমুহ প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। এফসিটিসি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমুহকে এর নির্দেশনা অনুসারে তামাক কোম্পানী ও তাদের সাথে সম্পৃক্তদের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা আর্টিক্যাল ৫.৩ তে উল্লেখ করা হয়েছে। তামাক কোম্পানীগুলোর প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধে এই চুক্তি অত্যন্ত কার্যকর।
 
ড: এনামুল হক বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর তামাকজাত পন্যর প্রসারে বাংলাদেশে কোম্পানীগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পৃষ্ঠপোষকতা আড়ালে নানাধরনের কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে এগুলো বাস্তবায়ন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এসকল কোম্পানীগুলোকে সহযোগিতা প্রদাণ থেকে বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচীর ক্ষেত্রে নাম, সাইন, ট্রেডমার্ক, প্রতিক এগুলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
 
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বিশ্বের কিছু দেশ এফসিটিসি ৫.৩ স্বাক্ষর করার পাশাপাশি এর বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । ফিলিপাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি আর্টিকেল ৫.৩ কমিটি স্থাপন করা হয়েছে। থাইল্যান্ড বহুজাতিক তামাক কো¤পানির হস্তক্ষেপের কৌশল চিহ্নিতকরণ এবং তা প্রতিহত করছে। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকার উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বহুজাতিক তামাক কোম্পানীগুলোর প্রতারণামূলক কার্যক্রমের ফলে আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছি। দেশের সার্বিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে।
 
চলচ্চিত্র পরিচালক ছট্কু আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে নাটক/সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসাওে নিষিদ্ধ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটি মানা হচ্ছে না। বহুজাতিক তামাক কোম্পানীগুলোর প্রভাবমুক্ত রাখতে এবং এ ধরনের দৃশ্য কমাতে এবং শিল্পী ও কলা-কুশলীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। 
 
সামিয়া আফরিন বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্তর্জাতিক এই চুক্তিতে স্বাক্ষর ও অনুস¦াক্ষরকারী রাস্ট্র হিসেবে এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ ও অন্যান্য আর্টিকেলসমূহ প্রতিপালন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায়িত্ব রয়েছে। এদেশে আন্তার্জাতিক এই চুক্তিটি বাস্তবায়ন করতে হলে তামাক কোম্পানি কর্তৃক আয়োজিত “সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি” প্রমানের অপকৌশল ও অপচেষ্টাকে প্রতিহত ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাথে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
 
তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে সুরক্ষা করার জন্য এই নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়ন অতীব জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, নাটাব, প্রজ্ঞা, এইড ফাউন্ডেশন, ইসি বাংলাদেশ, ইপসা, একলাব, মানবিক, টিসিআরসি, অরুণোদয়ের তরূণ দল, বউকস, সাতক্ষীরা মানব কল্যাণ সংস্থা, ও সারাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সদস্য সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিগণ।