English | Bangla
স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ তামাক ব্যবহার ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করা জরুরি

রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা গড়ে তুলতে তামাক ব্যবহার ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তামাকজাত দ্রব্য হতে আদায়কৃত ১% সারচার্জ ব্যবহারে প্রণীত নীতিমালাটি দ্রুত চুড়ান্ত করা জরুরি। গত ১৭ এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১ টায় ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি), স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্সেস (বিইউএইচএস) ও  ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এই আহ্বান জানানো হয়।
 
সেমিনারে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সংগঠনের পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তি এর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এর মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল ইসলাম এবং বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্সেস এর উপাচার্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান এম. মোজাহেরুল হক, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রোগ্রাম অফিসার ডাঃ মাহবুব সোবহান, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভর্সিটি এর ভাইস চেয়ারম্যান বোর্ড অব ট্রাস্টি ব্যারিষ্টার শামীম পাটোয়ারী। 
 
মুল প্রবন্ধ উপস্থাপক মোঃ আসাদুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিবছর ৩.৪% মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করতে পারলে জিডিপিরও উন্নয়ন ঘটবে। বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য প্রতিরোধমূলক খাতে ব্যয় হচ্ছে মাত্র ১৩%। স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে অর্থায়ন জরুরি। স্বাস্থ্যখাতের অর্থায়নে তামাক ছাড়াও অন্য্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের উপরও অধিক কর আরোপ করা যেতে পারে। 
 
ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশে যুবদের সংখ্যা এখন অনেক বেশি, তাই এখন যুবকদের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যাতে আগামী দিনে একটি সুস্থ্য সবল জাতি পাওয়া যায়।  ডাঃ মাহবুব সোবহান বলেন, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। উক্ত কমিটি একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। উক্ত নীতিমালাটি দ্রুত চুড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। 
 
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস, শরীরচর্চা বা ব্যায়াম বা পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অনিয়ন্ত্রিত মাদক সেবন এবং তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ অসংক্রামক রোগ সৃষ্টির অন্যতম কারণ। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তামাক নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য আইনসমূহের কার্যকর বাস্তবায়ন জরুরি। 
 
গাউস পিয়ারী বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও রোগপ্রতিরোধে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবস্থাপনায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত আইন ও নীতি প্রনয়ণ, কায়িক পরিশ্রমের জন্য অবকাঠামো তৈরি/পরিবর্তন, মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিত, অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিষিদ্ধ এবং জনসচেনতামূলক উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
 
জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, অসংক্রামক ব্যাধি আজ বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই এ রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতি জোর দেয়া প্রয়োজন। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সরকারের উচিত যারা রোগ প্রতিরোধে কাজ করছে তাদের সহযোগিতা প্রদান করা। 
 
এম. মোজাহেরুল হক বলেন, জীবন ও সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমাদের বড় সম্পদ হচ্ছে স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্য উন্নয়ন ছাড়া রাষ্ট্রের উন্নয়ন সম্ভব নয়। জনগনের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন স্বাস্থ্য সেবাকে সহজলভ্য করতে হবে। আর এ লক্ষ্যে স্বাস্থ্যখাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। 
 
অধ্যাপক লিয়াকত আলী, অসংক্রামক রোগ দীর্ঘমেয়াদে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। অসংক্রামক রোগের কারণে উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে। চিকিৎসা বা হাসপাতাল কেন্দ্রিক চিন্তা হতে বেরিয়ে এসে সকলের সমন্বয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে।