English | Bangla
ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের সুপারিশ
ঢাকা শহরে প্রাইভেট কারে ৭ শতাংশ ট্রিপ হয় এবং এজন্য সড়কের সত্তর ভাগ জায়গা দখল করে রাখে। অপরদিকে বাস, রেল, নৌপথ, হাঁটা ও রিকশা এ সকল মাধ্যমে ৯৩ শতাংশ চলাচল হলেও এ মাধ্যমগুলির জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয় নি। তাই অনেকেই বাধ্য হয়েই প্রাইভেট কার কিনছেন। হাঁটা, সাইকেল, রিকশার সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে প্রাইভেট কারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো সম্ভব। এজন্য মানসম্মত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও সঠিক ও নীতি পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। 
 
গত ২০ সেপ্টম্বর সকাল ১১ টায় ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর সমন্বয়ে সরকারি এবং বেসরকারি ৪৪ টি সংস্থা দ্বারা গঠিত বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব এর ভিআইপি লাউন্সে “যানজট ও দূষণমুক্ত নগরায়নে প্রয়োজন, গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। 
 
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে ডিটিসিএ এর কেস প্রজেক্ট এর প্রকল্প পরিচালক এবং উপ-সচিব আনিসুর রহমান বলেন, সম্প্রতি রিভাইজ স্ট্রাটেজিক ট্রন্সপোর্ট প্লান গৃহিত হয়েছে। যেখান গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রাধান্য পেয়েছে। যা ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নূর-ই-আলম। তিনি বলেন, জ্বালানী সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সর্বপ্রথম সত্তরের দশকে বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসের প্রচলন হয়। বাংলাদেশে বেসরকারি উদ্যোগে ২০০৬ থেকে দিবসটি পালন করা হয়। তবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সম্মলিত উদ্যোগে এই প্রথম দিবসটি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নগরীকে বাসযোগ্য করতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উৎসাহ প্রদান দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য। 
বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এর সহযোগী অধ্যাপক মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে মানুষকে অযান্ত্রিক যান ও গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে পরিকল্পনা ও নীতিমালায় বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সহ-সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বিভাগীয় ও  জেলা পর্যায়ে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার যেন বদ্ধি না পায় এজন্য এখনই উন্নত গণপরিবহন চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক, সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যানজট নিরসনে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য ছোট ও মাঝারি শহরের উন্নয়ন করা প্রয়োজন। যেখানে কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে ঢাকার উপর চাপ কমবে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এর নির্বাহী পরিচালক একে এম মাইনুদ্দিন বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থায় রেল ও নৌপথকে উপক্ষা করে সড়ককেন্দ্রিকতায় সঙ্কট বেড়েছে। বিশেষ করে সড়কে প্রাইভেট কারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে যানজট বেড়েছে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, পাবলিক পরিবহন, হাঁটা, সাইকেল ও রিকশাকে উপেক্ষা করায় কারণেও মানুষ প্রাইভেট কার ক্রয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। 
 
সভাপতির বক্তব্যে ডিটিসিএ এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়ি মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আজকের এই আয়োজন আশা করা যায় আমাদের দেশে অতি শীঘ্রই প্রাইভেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দূষণ ও যানজটমুক্ত এবং জ্বালানী সাশ্রয়ী পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এর মাহবুব রব্বানী, ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশ এর পশ্চিম বিভাগের পুলিশ সুপার সাইফুল হক, ডিটিসিএ এর এনফোর্সমেন্ট অফিসার জনাব জাকারিয়া, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না , ঘুড়ি ফেডারেশন এর শাহজাহান মৃধা বেনু, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস প্রমুখ।