English | Bangla
জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন: মোজাফফর হোসেন পল্টুকে সম্মাননা প্রদান

ধূর্ত তামাক কোম্পানির সঙ্গে সরকার, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কর্মকর্তাদের মৌলিক বিরোধ ও নৈতিক বিভেদ রয়েছে। তামাক কোম্পানির উদ্দেশ্য কিশোর-তরুণদের মৃত্যুঘাতী পণ্য বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকের নেশায় ধাবিত করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন। অন্যদিকে সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন। এ বিরোধের কারণে তামাক কোম্পানির সব ধরণের কার্যক্রম প্রতিহত ও বর্জন করতে হবে। আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তামাক কোম্পানির কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। 
 
জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস ২০১৬ ও তামাক বিরোধী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উদ্যোদে সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। 
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর বাংলাদেশস্থ উপদেষ্টা মো. শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সভাপতি, খ্যাতনামা সমাজ সেবক ও রাজনীতিক মোজাফফর হোসেন পল্টুকে তামাক বিরোধী সম্মাননা ২০১৬ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ এবং সম্মাননাপ্রাপ্ত বরেণ্য ব্যক্তিত্ব মোজাফফর হোসেন পল্টু’র সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন মানবিক-এর উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন। 
 
হেলাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছিল। বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির প্রতারণামূলক প্রচারণা ‘ভয়েজ অব ডিসকভারি’ প্রতিহত করতে তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট। সেই থেকে ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাকমুক্ত দিবস হিসাবে উদযাপিত হচ্ছে। 
 
মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো কূটকৌশলের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে কিশোর-তরুণদের নেশার দিকে ধাবিত করছে। আইন অনুযায়ী তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনা গেলে অবৈধ প্রচারণা বন্ধ করা যাবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে পূর্বসূরীদের মত বর্তমান প্রজন্ম আন্তরিকভাবে কাজ করবে, মোজাফফর হোসেন পল্টুর মত প্রবীণদের কাছ থেকে তরুণেরা অনুপ্রাণিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। 
এ পর্যায়ে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ ও ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর বাংলাদেশস্থ উপদেষ্টা মো. শফিকুল ইসলাম মোজাফফর হোসেন পল্টুর হাতে স্বর্ণপদকসম্বলিত স্মারক ও সম্মাননা পত্র তুলে দেন। এ সময় মিলনায়তনে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে করতালির মাধ্যমে প্রবীণ রাজনীতিক ও সমাজ সেবক মোজাফফর হোসেন পল্টুকে অভিনন্দন জানান। 
 
পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে, যখন কলেজে পড়তেন-তখন যক্ষা বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছিলেন মোজাফফর হোসেন পল্টু। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বঙ্গবন্ধু অনুসারী হিসাবে রাজনীতিতে পদার্পন করেন। ছয় দফা ও গণআন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন মোজফফর হোসেন পল্টু। পাকিস্তান আমলে ক্রীড়া অঙ্গণের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সম্পাদকসহ বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়ন এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের চেয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সভাপতি ও বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ এর সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।  
 
মোজাফফর হোসেন পল্টু বলেন, আমাকে তামাক বিরোধী জোট যে সম্মান প্রদর্শন করেছে, এ সম্মান সব তামাক বিরোধী কর্মীর। তামাক ও ধূমপান মরণব্যাধি ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিসের মত ভয়াবহ, জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী রোগের কারণ। তামাক সেবন বা ধূমপানের কারণে এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। কিন্তু কিশোরদের তামাকের নেশায় ধাবিত করতে তামাক কোম্পানিগুলো অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।
 
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলোর বিভ্রান্তিমূলক কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি অনেক। ২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী দেশকে তামাকমুক্ত করার পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৫ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ২৫% কমানোর ঘোষণা বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানি ও তাদের সব কার্যক্রমকে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে হবে। 
 
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মুখপত্র ‘সমস্বর’ এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনা তুলে ধরেন সৈয়দা অনন্যা রহমান।