English | Bangla
গুলিস্তান পার্কে হকার পুনর্বাসন না করার আহ্বান

ঢাকা শহরে পার্ক ও খেলার মাঠের স্বল্পতা রয়েছে বিশেষ করে পুরান ঢাকায় এই সঙ্কট আরো প্রকট। সম্পতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক গুলিস্তান পার্কে অস্থায়ীভাবে দুই হাজার পাঁচশত ছয় (২৫০৬) জন তালিকাভূক্ত হকারের বসার ব্যবস্থা করা হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে অত্র এলাকায় শরীরচর্চা ও বিনোদনের ক্ষেত্র সংকুচিত হবে এবং প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাই গুলিস্থান পার্কটিতে হকার পুনর্বাসনের চিন্তা পরিহার করে এটিকে আরো ব্যবহার উপযোগী করা প্রয়োজন। ২ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১১টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), গ্রীন ভয়েস, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে “হকার পুনর্বাসনের জন্য গুলিস্তান পার্ক ব্যবহারের চিন্তা পরিহার করা হোক” শীর্ষক মানববন্ধন থেকে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

বক্তারা বলেন, গুলিস্থান পার্কে হকার পুনর্বাসনের সংবাদে জনমনে পার্কটি হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পার্ক ব্যবহারের বিষয়টি “মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মূক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০” এর পরিপন্থী। তারা আরো বলেন, ইতিপূর্বে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য হকার্স মার্কেট নির্মাণ করা হলেও গুলিস্তানের কোন একটি ফুটপাত খালি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন হকারের আগমন ঘটেছে। গুলিস্তান পার্কের বেলায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা রয়েছে। হকারদের পার্ক, মার্কেট বা অন্য কোথাও পুনর্বাসনের চাইতে ফুটপাতের যে স্থানে সম্ভব সেখানে নকশা ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটিয়ে সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন।

মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের মাননীয় মেয়র জনাব সাঈদ খোকনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পার্ক ও হকার বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরেন। এর প্রেক্ষিতে মেয়র জানান, তিনি পুরো পার্ক নয় মহানগর নাট্যমঞ্চ এর সামনে বা আশ পাশের খালি জায়গায় হকারদের বসার ব্যবস্থা করার কথা বলেন। এ সময় প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে মহানগর নাট্যমঞ্চটি পার্কের অংশ বলে সেখানে হকারদের না বসানোর আহ্বান জানান। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনার জন্য মেয়র একটি গোলটেবিল বৈঠকে সকলের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি এবং মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে হকার পুনর্বাসনের জন্য গুলিস্তান পার্ক ব্যবহারের চিন্তা পরিহার করা; গুলিস্তান পার্কটির মধ্য দিয়ে নির্মিত রাস্তা বন্ধ করে পার্কটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা; পার্কটিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো অর্থাৎ হাঁটাপথ, বসার স্থান, ছাউনি, শিশুদের খেলাধুলার উপকরণ নিশ্চিত করা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশের সুযোগসহ পার্কের অভ্যন্তরে তাদের জন্য সুবিধাজনক উপকরণের ব্যবস্থা করা; পার্কটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি, প্রশাসন, স্থানীয় ব্যবসায়ী, হকার সকলের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা; প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে নিয়মিত সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা; ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভূক্ত সকল পার্ক ও খেলার মাঠ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করা; পার্কের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা পার্কের নিরাপত্তায় সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা প্রহরী নিশ্চিত করা; গুলিস্তান এলাকায় শুধুমাত্র গণপরিবহন চলাচলের সুবিধা রেখে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে ফুটপাত প্রশস্ত করা; ফুটপাতে হকার বসতে পারে সেভাবে নকশা প্রণয়ন করা; হকারদের খাড়াভাবে পণ্য সাজানোর ব্যবস্থা করা যাতে কম জায়গা লাগে; এককালীন ও নিয়মিত ফি আদায়ের ভিত্তিতে হকারদের হস্তান্তর না করার শর্তে লাইসেন্স প্রদান করা; হকার লাইসেন্স নাম্বারের বিপরীতে ফুটপাতে যেখানে সম্ভব সেখানে নাম্বার দিয়ে চিহ্নিত জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া; হকারেরা নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করতে পারবে না এবং কোন স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারবে না এই মর্মে শর্তারোপ করা; হকারদের ফুটপাত ও রাস্তা পরিস্কার রাখার দায়িত্ব প্রদান অন্যথায় লাইসেন্স বাতিল করা; হকারদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি, প্রশাসন, স্থানীয় ব্যবসায়ী, হকার সকলের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করার সুপারিশ প্রদান করা হয়।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় এবং পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন, বাপা’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, নির্বাহী সদস্য মহিদুল হক খান ও যুগ্ন সম্পাদক হুমাযুন কবির সুমন, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর হাফিজুর রহমান ময়না, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন এর সেক্রেটারি হেলাল আহমেদ, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর সদস্য সচিব আমিনুর রসুল প্রমুখ।