English | Bangla
পৌনে এক কিমি পথের এক-তৃতীয়াংশই হাঁটার অনুপোযোগী
যানজট, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, জ্বালানী, অবকাঠামো সকল কিছু বিবেচনায় হাঁটা সবচেয়ে সুবিধাজনক যাতায়াত মাধ্যম। ঢাকা শহরে হেঁটে প্রতিদিন প্রায় ৬০ লক্ষ ট্রিপ সংঘটিত হয়। হাঁটার পরিবেশ উন্নত করার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। হাঁটার জন্য অবকাঠামো অর্থাৎ ফুটপাত, সমতলে রাস্তা পারাপারে ক্রসিং এর ব্যবস্থা এবং গলি রাস্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই। বিদ্যমান ফুটপাতগুলিও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার প্রতি নজর দেওয়া হয় না। এজন্য হাঁটতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হতে হয়। বিশেষ করে নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি।  ১০ মে ২০১৬ সকাল ১১ টায় ধানমন্ডি র‌্যাংগস আনাম প্লাজা থেকে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত পৌনে এক কিমি পথে পদযাত্রা থেকে পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, সেখানে এক-তৃতীয়াংশ পথই হাঁটার অনুপোযোগী। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নারীপক্ষ, বারসিক, বিসিএইচআরডি, পরিবর্তন চাই, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ‘নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের জন্য নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে হাঁটার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বানে’ উক্ত পদযাত্রা শেষে আবাহনী খেলার মাঠের সম্মুখে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা হাঁটার উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন।
 
পদযাত্রায় রাজধানীর সাত মসজিদ সড়কে আনাম র‌্যাংগস প্লাজা থেকে আবাহনী মাঠ পর্যন্ত পৌনে এক কিলোমিটার ফুটপাত পরিদর্শন থেকে দেখা যায়, ফুটপাতগুলো যথাযথভাবে তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। যদিও এখানে র‌্যাম্প (ঢালুপথ) প্রদান করা হয়েছে কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে ফুটপাত ধরে যাতায়াত সম্ভব নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল পথচারীদের জন্য সমতলে রাস্তা পারাপারের কোন সুব্যবস্থা নেই। ফুটপাতে এবং সড়কের পাশে আবর্জনার স্তুপ, বিভিন্ন ভবন নির্মাণ সামগ্রী, বিভিন্ন স্থানে অসমান এবং ভাঙ্গাচোড়া থাকার ফলে পথচারীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয় ও দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ফুটপাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি অফিস অবস্থিত যা ফুটপাত সংকুচিত করে পথচারীদের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় ফুটপাতে অবৈধভাবে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটর সাইকেল পার্কিং করে রাখা হয়। ফুটপাত পথচারীদের জন্য তৈরি কিন্তু সেখানে তাদের অধিকার ক্রমাগত খর্ব হয়ে চলেছে। 
 
পদযাত্রা শেষে সমাবেশে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে মিরপুর, উত্তরা, গাজীপুর, পুরাতন ঢাকাসহ মোট ৬ টি এলাকায় জরিপের মাধ্যমে দেখা গেছে ৮২ শতাংশ এলাকায় ফুটপাতের অবস্থা খারাপ এবং ৪৪ শতাংশ জায়গায় কোন ফুটপাত নেই। যে সকল এলাকায় ফুটপাত আছে তাও নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল  পথচারীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী নয়। সকল এলাকায় ফুটপাত থেকে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রশস্ত ফুটপাত পথচারীদের জন্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
 
মাকসুদা বেগম, এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, নারীপক্ষ বলেন, নগরে ফুটপাতগুলো রাতের বেলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। ফলে  নারীরা ফুটপাতে হাঁটতে নিরাপদ বোধ করেন না। পথচারী বিশেষত নারী পথচারীদের জন্য এ সকল সুবিধা নিশ্চিতকরণে তিনি সিটি কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 
 
হেলাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন বলেন, ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়রদ্বয় শহরে পর্যাপ্ত পরিমাণ আবর্জনার পাত্র স্থাপনের কাজ করছেন। ফুটপাতে আবর্জনা পথচারীদের চলাচল নিরুৎসাহিত করে। কাজেই আমাদের সকলের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মো মহিউদ্দিন, গবেষণা সহকারী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বলেন, রাজধানীর ফুটপাতসমূহ শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সহ সকল পথচারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ফুটপাতে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী, অবৈধ পার্কিং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের একটি বড় অন্তরায়। 
 
সমাবেশে সমাপনী বক্তব্যে হাফিজুর রহমান ময়না, সভাপতি, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) বলেন, বাংলাদেশে “জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা, ২০১৩” “ঢাকা স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লান (এসটিপি) তে “পথচারীর অগ্রাধিকার” বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও পথচারীদের সুবিধা সৃষ্টিতে বিশেষ করে, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জন্য উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয় না। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার জিয়াউর রহমান লিটুর সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজনীন কবীর, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আতিক মোর্শেদ, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন আহমেদ, বারসিক এর সমন্বয়কারী পাভেল পার্থসহ আরো অনেকে।