English | Bangla
হকার ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের দাবি
ঢাকা শহরে হকার ব্যবস্থাপনায় জাপানের টোকিও শহরের Shotengai Street এর ন্যয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পথচারী এবং হকার উভয়ের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে। এজন্য হকারদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে জাতীয় পথবিক্রেতা নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। আজ ০৬ মার্চ ২০১৮ সকাল ১১.০০টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানের কৈবর্ত সম্মেলন কক্ষে “in-Win Situation for Pedestrian and Hawkers: Learning from Japan শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জাপানে পথচারীদের জন্য নিরাপদ ও আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরির জন্য কমিউনিটির মধ্যে Shotengai Street ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। যেখানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। গাড়ি চলাচলের সময়ও উক্ত সড়কগুলিতে পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চালু আছে। কমিউনিটির রাস্তায় স্থানীয় জনগণ, দোকানি, নগর কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের সমন্বয়ে এই ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। এই ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব দোকানীদের উপর ন্যস্ত রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে নগর কর্তৃপক্ষ সহায়তা করে থাকে।
 
পাশাপাশি অবস্থিত Shotengai Street  গুলির মধ্যে পথচারী ও ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এজন্য প্রতিটি সতেংগাই স্ট্রিট এর জন্য গঠিত কমিটি কর্তৃক নানা উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিবাসীদের নিজের কমিউনিটি থেকে কিনতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হয়। মাঝে মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। সব মিলে স্থানীয়দের মধ্যে কমিউনিটি এর প্রতি ভালোবাসা ও মালিকানা বোধ জাগ্রত হয়। টোকিও শহরের বাসিন্দারা পাবলিক পরিবহন থেকে এ রকম একটি প্রাণবন্ত ও আপনতম জায়গা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাসায় ফিরে থাকেন। 
 
১৬ থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত টোকিও শহরে মূলত হেঁটেই যাতায়াত হতো। সে সময় হকার এবং নানা কার্যক্রমের দ্বারা পথচারীদের নিকট রাস্তাগুলি গণপরিসরের ন্যয় ঝিল। কিন্তু যান্ত্রিক যানের আগমনে বিশেষ করে ১৯৭০ এর দিকে পথচারীদের চলার পথ সংকুচিত করে ফুটপাত থেকে হকার এবং পথচারীবান্ধব সকল উপকরণ সরিয়ে ফেলে যান্ত্রিক বাহনকে প্রাধান্য দিয়ে রাস্তা প্রশস্ত করা হয়। ফলে সামাজিক নিরাপত্তা, সামাজিকীকরণ, পরিবেশগতসহ নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয় জাপান। ২০ বছরের মাথায় জাপান সরকার যান্ত্রিকবাহন নির্ভর পরিকল্পনার বিরুপ ফলাফল  বুঝতে পারে পুনরায় পথচারীবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। 
 
বক্তারা বলেন, সারা বিশ্বে উন্নত শহরগুলিতে কার্বণ নিঃসরণ কমাতে যাতায়াত চাহিদা হ্রাস করতে মিশ্র এলাকা তৈরির উপর প্রাধান্য দেওয়া হয়। ঢাকা শহরে বেশিরভাগই মিশ্র এলাকা এবং এখানে প্রচুর পথচারী ও হকার রয়েছে। একটি প্রাণবন্ত, যানজটমুক্ত ও কম কার্বণ নিঃসরণে দৃষ্টান্ত তৈরিতে এটি আশির্বাদ। এজন্য টোকিও শহরের ঝযড়ঃবহমধর ঝঃৎববঃ গুলির ন্যয় হকারদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। যার আলোকে এলাকাভিত্তিক হকারদের এসোসিয়েশন করে নগর কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন ও অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। উক্ত নীতিমালার আওতায় হকারদের জন্য ফুটপাতে বা রাস্তায় জায়গা নির্দ্দিষ্ট করে নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক হকার এসোসিয়েশনকে নিয়ম নীতি পালন পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অর্পণ করতে হবে। কোন ব্যতিক্রম হলে নগর কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। এভাবে ঢাকা শহরে পথচারী ও হকার উভয়ের মঙ্গল বয়ে আনা সম্ভব।
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের  প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন। সভায় বক্তব্য রাখেন হেলথব্রীজ এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার, ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শারমিন নাসরিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান, বাংলাদেশ হকার সংগ্রাম পরিষদ এর আহ্বায়ক আবুল হোসাইন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট এর আমিনুর রসূল, বুয়েটের এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক তাসনিম ফিরোজ, নগর পরিকল্পনাবীদ সাদিয়া চৌধুরী, বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্সলীগ এর সভাপতি মোঃ হারুন উর রশিদ, জাতীয় সম্মিলিত হকার্স ােজ এর সভাপতি মোহাম্মদ আলী হাওলাদার, বাংলাদেশ ছিন্নমূল হকার্স সমিতির কামাল সিদ্দিকি, বাংলাদেশ হকার্স সংগ্রাম পরিষদের সিকান্দার হায়াত, বাংলাদেশ হকার্স এসোসিয়েশন এর কার্যকরী সভাপতি মোরশিকুল ইসলাম প্রমুখ।