English | Bangla
বাংলাদেশের সমস্যাঃ উত্তরণে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা
ঢাকার যানজট একটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। ঢাকা বর্তমান অবস্থানকে যানজট না বলে প্রাইভেট গাড়ীর জট বলাই শ্রেয়। দীর্ঘদিন ধরে পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত না করা, পথচারীদের পথ রুদ্ধ করা এবং রিকশা-সাইকেলের মতো বাহনগুলোর চলাচলের কোন ধরনের সুষ্ঠ পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়নি। বরং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ না করার প্রেক্ষিতে যানজট দিন দিন প্রকট আকার ধারন করেছে। পশ্চিম ইউরোপের অনেক শহর প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইটালি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, স্পেন, পর্তূগাল, সুইজারল্যান্ড এর অনেক শহর রয়েছে। কারণ প্রাইভেট কারের অধিক্য যানজট, দূষণ, জ্বালানী অপচয়, ভূমির অপচয়, দূর্ঘটনা, স্বাস্থ্যহানি ও নানা সামাজিক সমস্যার জন্ম দেয়।  ৭ জুন সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে সংস্থার সেমিনার কক্ষে “বাংলাদেশের যানজট সমস্যাঃ উত্তরণে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা”বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
 
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মাহাবুবুল বারী। তিনি বলেন, নগর যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জায়গা, জ্বালানী ও দূষণ এই তিনটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। নগর যাতায়াত পরিকল্পনা মানে শুধু অনেক অর্থ দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা নয়। তিনি বলেন একটি সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ১ শতাংশ জায়গা নিয়ে যাত্রী পরিবহন করে ২.২০ জন। অপর দিকে বাইসাইকেল ০.১২ শতাংশ জায়গা নিয়ে যাত্রী পরিবহন করে ৯.১৭ জন। আর বাস ২.০০ শতাংশ জায়গা নিয়ে যাত্রী বহন করে ৪৪.২০ জন। রিকশা ০.৪০ শতাংশ জায়গা নিয়ে যাত্রী বহন করে ৩.৪০ জন। এজন্য বিশ্বের অনেক শহরে নগর পরিকল্পনায় হাঁটা, বাইসাইকেল এবং গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ৪৫ মিলিয়ন অর্থায়নে যে মেট্রোরেল করা হচ্ছে তা শুধু মাত্র ২ শতাংশ মানুষের যাতায়াতের চাহিদা পূরন করবে। অথচ শুধুমাত্র ১ বিলিয়ন খরচ করে যদি পথচারীবন্ধব ফুটপাত এবং বাই সাইকেলের জন্য ব্যবস্থা করা হয় তবে যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। পাশাপাশি তিনি নগর পরিকল্পনায় মিশ্র এলাকা গড়ে তোলার কথা বলেন। কারণ হাঁটার দূরত্বে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস থাকলে মানুষের ট্রিপ কমে যাবে এবং সড়কে গাড়ির চাপ কমবে। 
 
হেলথ ব্রীজ-কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন বলেন, ঢাকা শহরে পথচারী, বাইসাইকেল এবং গণপরিবহন ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়ায় হাঁটার গতিতে এখন গাড়ি চলাচল করে। যে ব্যক্তিগত গাড়ি যানজট তৈরি করে তাদের জন্য অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে এবং তাদের সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিশ্বের যে সকল শহরে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দিয়েছে তাদের দেশের যাতায়াত ব্যবস্থার চেয়ে যারা ব্যক্তিগত গাড়িকে নিয়ন্ত্রণ করে পথচারী, বাইসাইকেল এবং গণপরিবহন ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়েছে তাদের শহরগুলো অনেক বেশি নিরাপদ এবং যানজট মুক্ত। 
 
মতবিনিময় সভায় সভপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট গাউস পিয়ারী বলেন, যানজটে প্রতিদিন আমাদের কয়েক হাজার কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে। কাজইে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার মাধ্যমে পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন আইডাব্লিউবিবি এর সহকারি নেটওয়ার্ক অফিসার মোঃ মিথুন এবং এনসিওর আওয়ার রাইটস এর রিফাত পাশা প্রমুখ।