English | Bangla
অসংক্রমিক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ তৈরি জরুরী

বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৭% মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, তামাক সেবন, মদ্যপান সর্বোপরি অস্বাস্থ্যকর জীবনাচারের কারণে অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ আদমশুমারীর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে অনুর্দ্ধ ১৫ বছরের শিশুদের সংখ্যা ৫ কোটি ৮০ লক্ষেরও বেশি। যাদের জন্য পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ নেই। ফলে তারা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত তাদের শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণের একটি সমাধান হতে পারে। নিয়মিত হেঁটে বিদ্যালয়ে যাতায়াতের মাধ্যমে যেমন শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তেমনি বন্ধ‚দের সাথে গল্প করতে করতে যাওয়ার মাধ্যমে সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফলে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। পাশাপাশি যান্ত্রিক যানবাহনের উপর নির্ভরশীলতা কমানো মাধ্যমে কার্বন নি:সরণও হ্রাস করা সম্ভব হবে। প্রাণ-প্রকৃতির উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কোভিড-১৯ এর সময় যানবাহনে বদ্ধ অবস্থায় যাতায়াতের থেকে হেঁটে যাতায়াত করা হলে সংμমনের আশঙ্কা কম থাকে। আজ ৩১ আগস্ট ২০২১ সকাল ১০.০০ টায় রায়েরবাজার হাই স্কুলের অডিটোরিয়ামে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এ্যাস্ট্রাজেনেকা, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত’ শীর্ষক কর্মশালায় উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
নাঈমা আকতার, প্রকল্প কর্মকর্তা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের নগরে পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নেই। ফলে শিশুরা তাদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এতে করে ওজন বেড়ে যাওয়ায় ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, হৃদরোগসহ বিভিনড়ব রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, নিদ্রাহীনতা দেখা দেয় ও শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়। বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে সহজেই শিশুদের শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণ সম্ভব। হেঁটে যাতায়াতের ফলে শারীরিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে, গাড়ির সংখ্যা কমে দুর্ঘটনার সংখ্যা হ্রাস পায়, যানজট কম হয়, সময় বাঁচে, এবং যাতায়াত খরচ সাশ্রয় হয়। গাড়ির উপর নির্ভরশীলতা কমে গেলে কার্বন নি:সরণ কমে যাবে। অর্থাৎ বায়ু দূষণ হ্রাস করার মাধ্যমেও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
 
গাউস পিয়ারী, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন  । তিনি বলেন, ঢাকা শহরে স্কুলে হেঁটে ৩০ শতাংশ যাতায়াত হয়। অভিভাবকদের পছন্দানুযায়ী স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর জন্য দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে গাড়ির উপর নির্ভরশীলতা দেখা যায়। অনেক সময় সামাজিক মর্যাদার ভ্রান্ত ধারণা থেকে অনেকে অল্প দুরত্বেও সন্তানদের গাড়ি করে আনা নেওয়া করে থাকেন। তবে হাঁটার পরিবেশ উনড়বত না হওয়ার কারণেও অনেকেই গাড়ি অথবা রিকশার উপর নির্ভরশীল। শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত হেঁটে যাতায়াতে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের নিরাপদে হাঁটার পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।
 
মেহেরুনেড়বসা, রায়েরবাজার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক  বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত জরুরী। হেঁটে যাতায়াত শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা পূরণে ভূমিকা রাখবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নগরে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ উনড়বয়নে সচেষ্ট হতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হেঁটে বিদ্যালযে যাতায়াতের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। আজকের এ কর্মশালা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান আজকের কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত তথ্য তারা অভিভাবক, ছোট ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করবে এবং নিজেরা অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সচেতন হবে।
 
কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের বিভিনড়ব সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরে। হেঁটে যাতায়াতের সমস্যা হিসেবে শিক্ষার্থীরা ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, জলাবদ্ধতা, আবর্জনা, মটর সাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির বেপড়োয়া গতি, ইভটিজিং ইত্যাদি তুলে ধরে। সমাধান হিসেবে তারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, হাঁটার পরিবেশ উনড়বয়ন, সাইকেল লেন প্রদান, ফুটপাতে অবৈধ পার্কিং বন্ধ, রাস্তা থেকে আবর্জনা ও নির্মাণ সামগ্রী অপসারণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উনড়বতকরণ ইত্যাদি সুপারিশ তুলে ধরেন। পাশাপাশি তারা হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ উনড়বয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইনসহ বিভিনড়ব কার্যক্রম পরিচালনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।
 
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন রায়েরবাজার হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক তাহাজ্জোত হোসেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশের সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা প্রমা সাহা এবং রায়েরবাজার হাই স্কুলের শিক্ষার্থীবৃন্দ।