English | Bangla
বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব

সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছে কিন্তু “নীরব ঘাতক” হিসেবে চিহ্নিত অসংক্রামক ব্যাধি যেমন: ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ক্যান্সারের মত রোগগুলে কে জয়ের ক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি বহুগুণে। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৬৭% এর কারণ অসংক্রামক রোগ। পর্যাপ্ত খেলার জায়গা ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, হাঁটার পরিবর্তে যানবাহন বিশেষত যান্ত্রিক বাহনের উপর নির্ভরশীল হওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন পরিবেশগত এবং আচরণগত কারণে এ ধরণের রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে যা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে খুব সহজেই প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদা পূরণ ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন সম্ভব। কিন্তু হেঁটে যাতায়াতের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য হেঁটে যাতায়াতের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা হলে সকল বয়সের মানুষই উপকৃত হবেন।

হেঁটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা কি ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হয় ও সমাধান হিসেবে তাদের প্রত্যাশা এবং পাশাপাশি তাদের নিয়মিত বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াতে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ২৭ এবং ২৮ অক্টোবর ২০২১ সকাল ১০.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল, এ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের ৫০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে “অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যালয়ে হেঁটে যাতায়াত” শীর্ষক কর্মশালা আয়োজন করা হয় এবং এ কর্মশালায় উপস্থিত বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

আয়োজনে স্বাগত বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচার আমাদের শরীরকে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে ফেলে। এসব নেতিবাচক অভ্যাস আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে যাতে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি ক্রমশ হ্রাস পায়ে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়মিত হেঁটে যাতায়াতে আগ্রহী করে তোলা এবং তারা যেন নিরাপদে হাঁটার পরিবেশ পায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। শিক্ষার্থীদের নিরাপদে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়া নিশ্চিতকরণে সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির বলেন, বর্তমানে মানুষ অসংক্রামক রোগে অনেক বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং অসংক্রামক রোগ সম্পর্কে আমাদের অসচেতনতা এর একটি বড় কারণ। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই দুই দিনের কর্মশালা হতে তোমরা যেসব সচেতনতামূলক বার্তা পেয়েছো তা তোমাদের সহপাঠী, বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সকল সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে আলোচনা করবে। তাহলে তাদের মধ্যেও এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

কর্মশালার মুল প্রশিক্ষক ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার বলেন, সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই আমাদের নিয়মিত অন্তত ১ ঘন্টা শরীর চর্চা অথবা শারীরিক পরিশ্রম করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে ও স্বল্প দূরত্বে পায়ে হেঁটে যাতায়াতের অভ্যাস গড়ে তোলা হলে যাতায়াত চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রমের চাহিদাও পূরণ হবে। হেঁটে যাতায়াত মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখে ও সামাজিক সম্প্রীতি বাড়ায়।

কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরে। হেঁটে যাতায়াতের সমস্যা হিসেবে শিক্ষার্থীরা ভাঙ্গাচোরা রাস্তা, জলাবদ্ধতা, আবর্জনা, মোটর সাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির বেপড়োয়া গতি, ইভটিজিং ইত্যাদি তুলে ধরে। সমাধান হিসেবে তারা গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, রাস্তা সংস্কার, হাঁটার পরিবেশ উন্নয়ন, সাইকেল লেন প্রদান, ফুটপাতে অবৈধ পার্কিং বন্ধ, রাস্তা থেকে আবর্জনা ও নির্মাণ সামগ্রী অপসারণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নতকরণ ইত্যাদি সুপারিশ তুলে ধরেন। পাশাপাশি তারা হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্যাম্পেইনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এর সহকারি শিক্ষক মো: আল আমিন, মিনুয়ারা, মো: জাহিদুল ইসলাম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশের ডেভেলপমেন্ট অফিসার প্রমা সাহা এবং ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের শিক্ষার্থীবৃন্দ।