English | Bangla
“তামাক নিয়ন্ত্রন আইন ও নীতি সুরক্ষায় অতি দ্রুত এফসিটিসির আলোকে আচরণবিধি প্রণয়ন জরুরী”
বর্তমান বিশ্বে অকাল এবং প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তামাকের ভয়াবহতা বিবেচনায় সরকার এর ব্যবহার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে গ্রহণ করছে নানামুখী পদক্ষেপ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ইতোমধ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। 
 
বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ এই যে, সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তামাক কোম্পানীগুলোর অবৈধ হস্তক্ষেপ আইন বাস্তবায়ন ও সহায়ক নীতি প্রণয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরী করছে। উপোরোক্ত বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আজ ১৮ এপ্রিল ২০২২, সকাল ১১ টায়  ‘বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট’ এবং ‘ওয়ার্ক ফর এ  বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ’ এর সম্মিলিত উদ্যোগে বিএমএ ভবনের শহীদ ডা.শামসুল আলম খান (মিলন) সভা কক্ষে “তামাক নিয়ন্ত্রন আইন ও নীতি সুরক্ষায় করণীয়” শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভা আয়োজন করে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ(ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট’র পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপতিত্বে এবং স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য।
 
উক্ত সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হোসেন আলী খোন্দকার, সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব), জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি), মো. বিল্লাল হোসেন খান, চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, সৈয়দ মাহবুবুল আলম, কারিগরি পরামর্শক, দি ইউনিয়ন, হেলাল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, সুশান্ত সিনহা, সিনিয়র রিপোর্টার, একাত্তর টেলিভিশন এবং মো. নাসির উদ্দিন শেখ, কান্ট্রি ম্যানেজার, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস।
হোসেন আলী খন্দকার  বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করে তামাকের পক্ষে প্রচারনায় যুক্ত করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে সুনিদিষ্ট নীতি থাকা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে আরো কৌশলী হয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ অনুসারে গাইডলাইন প্রণয়নে আমাদের নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সরকার ধীরে ধীরে সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। 
 
মো. বিল্লাল হোসেন  বলেন, তামাকজাত দ্রব্য থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের তুলনায় তামাক ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট রোগের চিকিৎসা বাবদ ব্যয় অনেক বেশি। তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (২০০৫) যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। কাংক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে হলে সকলকে তামাক নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করতে হবে। 
 
নাসির উদ্দিন শেখ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন  ও নীতি সুরক্ষায় বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। কর বাড়লেই যে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে এমন কল্পনাপ্রসূত চিন্তাধারা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। তামাকের মতো একটি নেশাজাতীয় দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কর বৃদ্ধির পাশাপাশি লাইসেন্সিং ব্যবস্থার প্রয়োগ নিশ্চিত ও জোরদার করতে হবে। 
 
গাউস পিয়ারী বলেন, তামাক কোম্পানীর উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন। অপরদিকে সরকার ও আমাদের উদ্দেশ্য জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন। জনস্বাস্থ্য হানীকর পণ্য উৎপাদনকারী তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিশালী ও জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে আরও বেশি শক্তিশালী করে তুলতে বেসরকারী সংস্থাগুলোকে সরকারের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। 
 
হেলাল আহমেদ বলেন, আসন্ন বাজেটকে ঘিরে তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের  ব্যক্তিবর্গও তামাক কোম্পানির পক্ষে কাজ করছেন। এখন সময় এসেছে তামাকের পক্ষে এবং বিপক্ষে কারা কাজ করছে তাদের চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার।
 
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং অন্যায়ভাবে সুযোগ গ্রহণ করার জন্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে। এই সমস্যা সমাধানে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য আচরন বিধি প্রণয়ন করতে হবে। সরকারের সাথে তামাক কোম্পানীর আলোচনার বিষয়বস্তু জনসম্মুখে প্রচারের পাশাপাশি এর সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। 
 
সুশান্ত সিনহা বলেন, ১০ শতাংশের কম শেয়ার থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী (বিএটিবি) এর পরিচালনা পর্ষদে সরকারের উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। এটি সরকারের সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কার্যক্রম 
(সিএসআর) এ তামাক কোম্পানীর তুলনায় অন্যান্য কোম্পানী অধিক ব্যয় করলেও তামাক কোম্পানীর প্রচারনা বেশী লক্ষ্য করা যায়। ব্যাটেল অব মাইন্ড বা এ ধরনের বিভিন্ন কর্মসূচীগুলোর প্রকৃত উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানীর প্রচারনা বৃদ্ধি ও হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরী করা। কোম্পানির অবৈধ হস্তক্ষেপের তথ্যগুলোকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সরকারের কাছে তুলে ধরতে হবে। এছাড়াও তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গিকার বাস্তবায়নে অতি দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়নের দাবী জানান। 
 
সভায় আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, আবু নাসের অনিক, প্রকল্প কর্মকর্তা, এইড ফাউন্ডেশন, মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু, প্রোগ্রাম অফিসার, ডাস, এ এফ এম সারোয়ার, প্রাক্তন ভাইস প্রিন্সিপাল ও বিভাগীয় প্রধান, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও নাটাব, টিসিআরসি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশ হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট,পবা, উবিনীগ, বিসিসিপি, আইডিএফ , ভয়েস, ইপসা, নারীপক্ষ, বৃত্ত ফাউন্ডেশন, নবনীতা মহিলা কল্যান সমিতি, বাচতে শেখো নারী, কেরানীগঞ্জ হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ গার্লস গাইড এসোশিয়েশন এবং বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।