English | Bangla
সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে কৃষকের বাজার টেকসই করে তোলার আহ্বান

নিরাপদ শাক-সবজির যোগান নিশ্চিতকরণে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১২ এবং ১৫ নং ওয়ার্ডের কৃষকের বাজার দুটি ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণের বিষয়টি বিবেচনায় বাজার দুটি টেকসই করা এবং নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য ওয়ার্ডেও কৃষকের বাজার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। আজ ১৯ জানুয়ারি ২০২৩, সকাল ১০.০০ টায় মুন্সীগঞ্জের একটি রিসোর্টে কৃষকের বাজারের অভিজ্ঞতা বিনিময় বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন।  
উক্ত কর্মশালায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন অধিশাখার যুগ্মসচিব নুমেরী জামান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান এবং সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, ১০,১১,১২ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিনোয়ারা বেগম, নারায়ণগঞ্জের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা হাসনাত, ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের সিনিয়র টেকনিক্যাল এডভাইজার জাভিয়ে বোয়ান, সাসটেইনেবেল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট জাহাঙ্গীর আলম, এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী।
গ্রæপ ওয়ার্কে বক্তারা কৃষকের বাজার টেকসই করে তুলতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কৃষকের বাজারের জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ করা, সিটি কর্পোরেশনের নের্তৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক কৃষকের বাজার স্থাপন, উৎপাদন ও পরিবহনের ক্ষেত্রে সমবায় পদ্ধতি অনুসরণ, কৃষকের বাজারের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নিশ্চিতকরণ, পণ্যের বৈচিত্র্যতা নিশ্চিত করা, মাছ-মাংসের প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, স্থানীয় বাজারের সাথে পণ্যের মূল্যের সমন্বয় সাধন, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং গ্রহণ বিষয়ে কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, সিটি কর্পোরেশন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বয় সাধনসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, কৃষকের বাজার টেকসই করে তুলতে সকল অংশীদারদের সহযোগিতা প্রয়োজন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র উদ্যোগটি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। সিটি কর্পোরেশনের নের্তৃত্বে কৃষকের বাজার স্থায়ী করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের সাসটেইনেবেল এগ্রিকালচার স্পেশালিস্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষকের বাজার স্থায়ী করা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আজকের এই কর্মশালা থেকে আমরা কৃষকের বাজার স্থায়ী করে তুলতে স্বল্প, মধ্য, ও দীর্ঘ মেয়াদে কি করণীয় তা জানতে চাই।
ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের সিনিয়র টেকনিক্যাল এডভাইজার জাভিয়ে বোয়ান বলেন, কৃষকের বাজার নতুন কোন ধারণা নয়। নগর এলাকায় কৃষকের বাজারের মাধ্যমে আমরা নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি অংশীদারের সহযোগিতার মাধ্যমে কৃষকের বাজার স্থায়ী করে তোলা সম্ভব।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করার জন্য মাটি, বীজ, পানি প্রতিটিই নিরাপদ হওয়া প্রয়োজন। আমাদের কৃষিক্ষেত্রেও তা নিশ্চিত হতে হবে। ২টি কৃষকের বাজার দিয়ে পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরের খাদ্য চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ওয়ার্ডভিত্তিক কৃষকের বাজার গড়ে তোলা প্রয়োজন। ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন এক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উন্নয়ন অধিশাখার যুগ্মসচিব নুমেরী জামান বলেন, নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে মানুষ এখন আগ্রহী। নিরাপদ খাদ্যের সহজপ্রাপ্যতা বিবেচনায় স্থানীয় বাজার থেকে কৃষকের বাজারে পণ্যের মূল্য কতটা বেশি হবে, সে বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা দরকার। খাদ্যগুলো নিরাপদ কি না তা নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য পরীক্ষাগারে পণ্যগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন। নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরকে এ কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষকের বাজার টেকসই করার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বাজারটি টেকসই হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ফুড সিস্টেম সিটি কো-অর্ডিনেটর মো আনোয়ারুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, সহকারি সচিবসহ অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান), জেলা মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ, কৃষক ও বাজার কমিটির সদস্যসহ আরো বিভিন্ন অংশীজন।