English | Bangla
বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে বেসরকারি সংস্থাসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

পথচারীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা, সকলের জন্য প্রবেশগম্য মাঠ-পার্ক নিশ্চিতকরণ, বিদ্যালয়ভিত্তিক অঞ্চল ধারণা বাস্তবায়ন, এলাকাভিত্তিক সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ন্যায়সঙ্গত ঢাকা শহর গড়ে তোলা সম্ভব। বেসরকারি সংস্থাসমূহ ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। নিয়মিত এডভোকেসি ও স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রমের মাধ্যমে ড্যাপ বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। আজ ১৫ মার্চ ২০২৩, বুধবার, সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কৈবত সভাকক্ষে সংস্থার উদ্যোগে “ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনাঃ বসবাসযোগ্য নগর নিশ্চিতে করণীয়” শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার। আয়োজনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সাদিয়া আফরোজ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে সকল উপাদান প্রয়োজন, সেগুলোর বিষয়ে সরকারের একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী প্রয়োজন। সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি, ঢাকা শহরে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের এডভোকেসি, সামাজিক আন্দোলন চলমান রাখতে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, হকার উচ্ছেদ বা পুনর্বাসন কোন সমাধান নয়, বরং হকার ব্যবস্থাপনা জরুরি। ফুটপাতে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে কোন ধরণের পরিবর্তন প্রয়োজন, কতটুকু মাপের বসার ব্যবস্থা প্রদান করতে হবে, কোন গাছ উপযোগী, ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা ও নকশা প্রয়োজন। ইউএন হ্যাবিটেট এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, সকল মাঠ-পার্কে জাতি-ধর্ম-সক্ষমতা নির্বিশেষে প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক। ড্যাপে পথচারীবান্ধব পরিবেশ এবং মাঠ-পার্কের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা রয়েছে। ড্যাপ বাস্তবায়নে সকল অংশীদারদের সচেষ্ট হতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সাদিয়া আফরোজ বলেন, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কমিউনিটি স্পেস তৈরির বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা রাখা প্রয়োজন। রাজউকের থেকে ভবনের অনুমোদন নেয়ার ক্ষেত্রে এটি অবশ্য পালনীয় একটি শর্ত হতে হবে। সেই সাথে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন চালকদের সচেতন হতে হবে, তেমনি পথচারীদেরও আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হতে হবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ঢাকা শহরে বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ড্যাপে বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে এবং যান্ত্রিক যানের ব্যবহার কমিয়ে পথচারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। ঢাকা শহরে ৬০% শতাংশ মানুষ কোন না কোনভাবে হেঁটে যাতায়াত করে এবং শহরে মাত্র ৫% মানুষের ব্যক্তিগত গাড়ি রয়েছে। ন্যায়সঙ্গত শহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়স্ত্রণের বিকল্প নেই।
কর্মশালায় গ্রুপ ওয়ার্কে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেন। পথচারীবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী ফুটপাত নির্মাণ, র‌্যাম্পের ব্যবস্থা রাখা, ফুটপাতের নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা, রাস্তার পাশে ময়লার ট্রান্সমিশন না করা, সবুজায়ন নিশ্চিত করা; এলাকাভিত্তিক সামাজিকীকরণের সুযোগ নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তিকরণ, শিশু-কিশোরদের সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা, প্রবেশগম্য মাঠ-পার্ক তৈরির ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের সহযোগিতায় সকল দখলকৃত মাঠ-পার্ক পুনরুদ্ধার, মাঠ-পার্কে সকলের অধিকার নিশ্চিতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, মিডিয়ায় প্রচারণাসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।