English | Bangla
ঢাকায় সড়ক পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা গড়ে তুলুন-মতবিনিময় সভায় পরামর্শ

ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় একজন পথচারী সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়, পঙ্গুত্ব বরণ করেন অনেকেই। যার অধিকাংশই সড়ক পারাপার করতে গিয়ে দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। তাই ঢাকায় সড়ক পারাপারে জেব্রা ক্রসিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ), ক্যাম্পেইন ফর ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (সিএফডি), গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটি এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে ১৩ জানুয়ারী ২০১২ সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। 

এনডিএফ চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা’র সভাপতিত্বে সভায় আলোচনা করেন নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটির চেয়ারম্যান মোঃ আমির হাসান, সিএফডি এর চেয়ারম্যান মশিউর রহমান রুবেল। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন এর সঞ্চালনায় সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যাতায়াত বিশেষজ্ঞ মারুফ রহমান।
 
প্রবন্ধে মারুফ রহমান বলেন, ঢাকা শহরে প্রতিদিন একজন করে পথচারী সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। যার মধ্যে রাস্তা পার হতে গিয়ে ৪১% মারা যায় । তিনি আরও উল্লেখ করেন ঢাকার ৩৭% প্রাইমারী ট্রিপ হয় হাঁটার মাধ্যমে। হেঁটে প্রতি ঘন্টায় ৫ কি.মি পথ অতিক্রম করা যায় এবং ঢাকায় ৭৬% যাতায়াত দূরত্ব ৫ কিমি এর মধ্যে হওয়ায় হেঁটেই অধিকাংশ প্রয়োজন মেটানো যায়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে ৩০ থেকে ৬০% অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
হাফিজুর রহমান ময়না বলেন, সবাই হাঁটতে চায়। কিন্তু ঢাকা শহরে নিরাপদে হাঁটার মত সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। ঢাকা শহরের মাত্র ২ শতাংশ মানুষ প্রাইভেট গাড়ীতে চলাফেরা করে। অথচ সমস্ত প্রকল্প নেয়া হচ্ছে এবং বাস্তবায়িত হচ্ছে মাত্র এই ২% মানুষকে ঘিরে। আর বাকী ৯৮% মানুষ অবহেলিত। প্রতিটি কমিউনিটিতে ভাল মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল থাকলে ওখানকার অধীবাসী বিশেষ করে শিশুরা নিরাপদে দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, সংবিধানে স্পষ্টতই উল্লেখ রয়েছে অধিকাংশ মানুষকে প্রাধান্য দিতে হবে কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে তার উল্টো। যেখানে ঢাকা শহরের অধিকাংশ মানুষই হেঁটে চলাফেরা করে সেখানে সমস্ত স্থাপনা তৈরি হচ্ছে গাড়ী নির্ভর। ফুটপাতে হাঁটার সুষ্ঠু পরিবেশের কথা উঠলেই সবাই বলে হকার উচ্ছেদ করতে হবে। কিন্তু হকার উচ্ছেদ কোন সমাধান নয় বরং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাই সঠিক সমাধান। যে এলাকায় হকার থাকে সে এলাকায় মানুষ নিরাপদভাবে হাঁটতে নিরাপদ বোধ করে।
মশিউর রহমান রুবেল বলেন, কিছুদিন আগে প্রেসক্লাবের সামনে আমাদের সাংবাদিক নিখিল ভদ্র যখন দূর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করে তখনই যোগাযোগ মন্ত্রী সেখানে ফুটওভারব্রিজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। অথচ একবারও ভাবলেন না, সেই নিখিল ভদ্র এই ফুটওভারব্রিজ দিয়ে কিভাবে পার হবেন? পরিকল্পনার সময় প্রতিবন্ধী, গর্ভবতী নারী, শিশুদের কথা চিন্তা করা হয় না বলেই ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কারণ ফুটওভার ব্রিজ হলে কতিপয় মানুষের ভাল ব্যবসা হয়।
 
আমির হাসান বলেন, নগর পরিকল্পনায হাঁটাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। যা মানুষকে হাঁটতে নিরুৎসাহিত করছে। ফলে মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিসসহ নানা অসংক্রামক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই অসংক্রামক রোগের নিয়ন্ত্রণসহ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণে মানুষকে হাঁটতে উৎসাহী করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
 
ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, ঢাকায় মানুষের হাঁটার পথে সমস্যা তৈরি করছে প্রাইভেট কার। যত্রতত্র পার্কিং ও দোকানের মালপত্র, নির্মাণাধীন ভবনের মালপত্র ফুটপাতে থাকার কারণে মানুষের হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে নীতি নির্ধারকদের পাশাপাশি সব শ্রেণীপেশার মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। নাগরিক অধিকার আদায়ে যার যার অবস্থান অনুযায়ী সোচ্চার হতে হবে। 
 
মুক্ত আলোচনায় সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হুমায়নু কবীর হিরু, পীস ফাউন্ডেশন এর মহাসচিব ইফমা হোসেন, ব্র্যাক এর এডভোকেসি কর্মকর্তা কামাল হোসেন, সিরাক বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত, ব্যাংকার আলাউদ্দিন আহমেদ, বিএম সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ